গঙ্গার ভাঙন কবলিত নিমতিতার গ্রাম। ছবি: জীবন সরকার
শমসেরগঞ্জের শিবপুর, ধানঘড়া, হিরানন্দপুর ও ধুসরিপাড়ায় গঙ্গা ভাঙন প্রতিদিন চলছে। ভাঙন শুরু হয়েছিল শিবপুর দিয়ে। যা আজও অব্যাহত। শিবপুর গ্রামের এক তৃতীয়াংশ গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পরে চাষের জমি বাগান শেষ করে অবশিষ্ট গ্রামের মধ্যে এবার গঙ্গার ভাঙন চলছে। গঙ্গার জল কমতে থাকায় অনেকে মনে করেছিলেন আর ভাঙন হয়তো হবে না। কিন্ত সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানালেন, গঙ্গায় জল যখন বাড়তে থাকে তখন ভাঙনের আশঙ্কা কম থাকে, জল নীচে নামার সময় ভাঙন বেশি হয়। এখানে তাই ভাঙন হচ্ছে। শিবপুরের প্রশান্ত মন্ডল, দুলাল মণ্ডলরা জানাচ্ছেন, তাঁদের পাশে সরকার নেই। প্রশান্ত বলেন, ‘‘তাই আমরা কোন অভিযোগ কোথাও জানাব না। তিন মাস ধরে ভাঙন চলছে অথচ সরকার নীরব, কয়েটা গ্রাম জলের তলায় চলে গেল অথচ সেচ দফতর বলছে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বলছি বিজ্ঞানের যুগ। গঙ্গা ভাঙন রোধে কি বিজ্ঞানের কিছুই করার নেই।’’
ধানঘড়ার ফিরোজ সেখ বলেন, ‘‘গঙ্গা আমাদের চারটি গ্রাম ধ্বংস করে দিল। কত মানুষ ধার দেনা করে ঘর করেছিল তাদের ধার শোধ হল না, অথচ ঘরে বাস করতে পারল না। গঙ্গা ভাঙন তলিয়ে যাওয়ায় পর যারা আতঙ্কে ঘরের ছাদ ভেঙে ফেলেছে। তারা সেখানেই বাস করছে, খোলা ছাদের তলায়। এ ছাড়া কোন উপায় নেই।’’ ফিরোজ বলেন, ‘‘হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি বাস করে আসছিলাম একে অপরের সুখে দুখে জড়িয়ে ছিলাম। পুজোর সময় যে আনন্দ প্রতি বছর থাকত তা এ বার নেই। ভুলেই গিয়েছি পুজোর কথা। ধুসরিপাড়ায় পুজো দেখতে আমরা দল বঁধে যেতাম। মেলা বসত। পাঁপড় নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। আবার কখনও একটা পাঁপড় ভাগ করে খেয়ে বাড়ি এসেছি। আজ সবার অবস্থা একই। চোখের জল আমার যেমন পড়ছে, সেই হিন্দু বন্ধুর চোখের জল পড়ছে।’’ দুলাল বলেন, ‘‘নেতারা বলেছে আমাদের জায়গা দেবে। কিন্তু কখন দেবে কোথায় দেবে, তা কেউ বলতে পারছে না। সরকারি কোনও সাহায্য এখনও আসেনি।’’ নিমতিতা পঞ্চায়েতের প্রধান সিউটি হালদার বলেন, ‘‘ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য আমি সরকারের কাছে আবেদন করেছি তাদের যেন পুনর্বাসন দেওয়া হয়।’’