শাহানা বিবি ও টুকু। নিজস্ব চিত্র
মাথায় ঝাঁকড়া চুল। তাতে প্রায় জট পাকিয়েছে। ময়লা শতছিন্ন পোশাক। চরের গ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটিকে ঘুরতে দেখে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চুল কেটে স্নান করিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলেন শাহানা বিবি। আর তার পর সেই বাড়ি ছাড়তে চায়নি বছর কুড়ির ছেলেটি। প্রায় সাত বছর এ ভাবেই শাহানার সন্তান হয়ে উঠেছিল কথা বলতে তখন অপারগ ওই যুবক।
কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের সৌজন্যে কিছু দিন আগে খবর পৌঁছয় ওড়িশার রেঙালি গ্রামে। শুক্রবার রাতে সেখান থেকে ওই যুবকের পরিবারের সদস্যরা পৌঁছন জলঙ্গিতে। আর শনিবার জলঙ্গি থানায় এসে শাহানা বিবি টুকু দাস নামের ওই যুবককে তুলে দেন তাঁর পরিবারের হাতে।
সাত বছর ধরে সন্তান স্নেহে বড় করা টুকুকে ছাড়তে এসে থানা চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহানা। বারবার একটা কথাই বলতে থাকেন ‘‘আমাদের পক্ষে ওড়িশা যাওয়া সম্ভব নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছে আবেদন রাখছি যদি মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে এসে আমাকে মুখটা দেখিয়ে নিয়ে যায়। তা হলেই আমার সব কষ্ট মিটে যাবে।’’
কিন্তু তাঁর বাড়িতে কিভাবে পৌঁছালো টুকু? সাহানা বিবির দাবি, ‘‘বছর সাতেক আগে মাথায় এক ঝাঁক চুল, ছেঁড়া পোশাকের ছেলেটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল আমাদের গ্রামের ইস্কুলের কাছে। মনে হয়েছিল দিন কয়েক খাওয়া-দাওয়া জোটেনি। তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়া স্নান করিয়ে নাপিত ডেকে চুল কেটে দিয়েছিলাম। পরিয়ে দিয়েছিলাম বাড়িতে থাকা নতুন পোশাক। ভেবেছিলাম হয়তো চলে যাবে, কিন্তু তারপর আমার বাড়ি থেকে আর যেতে চায়নি।’’
শাহানা বিবি বলেন, ‘‘তখন থেকেই সন্তানের মতো লালন পালন করেছি ওকে। ভেবেই নিয়েছিলাম ও আমার আরও একটা সন্তান।’’ কিন্তু কিছু দিন আগে টুক অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই নিজের নাম লিখে দিয়েছিল টুকু। তারপর একটু একটু করে কথাও বলতে শুরু করে সে। তারপর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে টুকুর ছবি। আর তা দেখেই শুক্রবার ওড়িশা থেকে তার পরিবার ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা ছুটে আসেন জলঙ্গিতে। পরিবারের সঙ্গে আসা এলাকার স্বেচ্ছাসেবক শশীশেখর সিংহ বলেন, ‘‘বছর সাতেক আগে টুকু দাসকে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য বাবা মা নিয়ে গিয়েছিল কটকে। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয়েছিল সে তারপর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি। ধন্যবাদ শাহানা বিবিকে, তার জন্যই সাত বছর পরে হলেও মায়ের কোলে ফিরে গেল টুকু দাস।’’
পুলিশ জানিয়েছে ৭ বছর পরে হলেও পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে তারাও খুশি।