গত বৈশাখেও লাল আবীর উড়েছিল ডোমকলে।
নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে, জোটের প্রায় ধুলিসাৎ আবহে যে সামান্য কয়েকটি গাঁ-গঞ্জে বামেরা তাদের পুরনো দিন হারানো স্মৃতির মতো ধরে রেখেছিল, প্রান্তিক জনপদ ডোমকল তার একটি।
প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ডোমকল কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী আনিসুর রহমান। তথ্য এটুকু তুলে দেওয়াই যথেষ্ট নয়। সে বার, প্রাক- নির্বাচনী জোটে যে কয়েকটি জায়গায় কংগ্রেস ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াইয়ের নামে বামেদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল, ডোমকল ছিল সেই তালিকায় প্রথম দিকে। এবং জোটের ভোট ভাগ হওয়া সত্ত্বেও ডোমকলের বাম-মনস্কতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়নি।
তা হলে, পালা বদলের ছ-বছর পরে যে হিসেব বদলায়নি, সামান্য কয়েক মাসে আচমকা সেই ডোমকলের এই ফল-বদল কেন?
আনিসুর হাসছেন, ‘‘এখনও আপনারা বলবেন, ডোমকলে বামেরা হেরে গিয়েছে!’’ তাঁর অনড় দাবি, দু-সপ্তাহ আগে, রবিবার ভোটের সকালটা ছিল নিছক ছেলেখেলা, ‘প্রহসন’। তিনি বলছেন, ‘‘জেনে রাখুন, স্বাভাবিক নির্বাচন হলে আমরা প্রায় ষাট শতাংশ ভোট পেতাম।’’ তা বলে একেবারে সাত শতাংশে নেমে এল বাম-ভোট?
তিনি পরিচিত বাম ভোটার নন। বরং এলাকার মানুষ তাঁকে কংগ্রেস-অনুরক্ত বলেই জানেন, জুগিন্দার ষাটোর্ধ্ব সেই হেলাল মণ্ডল বলছেন, ‘‘আর যাই বল বাপু, ডোমকল সিপিএমের। আমি কংগ্রেসের লোক হয়েও বলছি। ওটা আমরা কখনও হাতাতে পারিনি।’’ তিনি মনে করছেন, পুর ভোটে বামেরা সাড়ে সাত শতাংশ ভোট পায়নি। ওটা ছাপ্পা মারার পরে তৃণমূল ওদের (সিপিএম) ‘দয়া’ করে দিয়েছে! বলছেন, ‘‘বাইরের লোক, অস্ত্র নিয়ে দিনভর দাপাদাপি না করলে এ বারও সিপিএমই জিতত ডোমকলে।’’
তৃণমূলের এক জেলা নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আসলে কি জানেন, ভোটের রাজনীতিতে ফেয়ার (স্বচ্ছ) বলে কিছু কী হয়, ডোমকল যতই তলায় তলায় লাল থাকুক জিতেছে তো সবুজ রং!’’ কথাটা উড়িয়ে দিচ্ছেন না মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস নেতারাও। দলের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ যখন কংগ্রেসের দূর্গ ছিল, তখনও ডোমকলে দাঁত ফোটাতে পারিনি আমরা। আমরা জানি, এ বারও ডোমকলে সিপিএমই জিতেছে। ফলটা নিছক ছেলেখেলা!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘ডোমকলে ভোটের নামে প্রহসন নিয়ে আর নতুন করে কী বলব!’’ ২ জুন তাই সেখানে সভা করতে চলেছে কংগ্রেস।
জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘‘এ ভাবে আমাদের নিশ্চিহ্ন করা যায় না। আমরা এই প্রহসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করছি।’’