মণিপুর রাজবাড়ি, নবদ্বীপ।
অশান্ত মণিপুরে আটকে পড়েছেন নবদ্বীপের চার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে নবদ্বীপের মণিপুর রাজবাড়ির দুই সদস্য রয়েছেন। তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
নবদ্বীপের সঙ্গে মণিপুরের সম্পর্ক কয়েক শতকের। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের প্রবাদপ্রতিম রাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহ নবদ্বীপে মহাপ্রভুর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে পূজার্চনা শুরু করেন। ‘অনু মহাপ্রভু’ নামে পরিচিত ওই বিগ্রহের ভার নেন রাজকন্যা বিম্বাবতী। তার কয়েক বছর আগেই নবদ্বীপের দক্ষিণ অঞ্চলে মণিপুর থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি যাত্রী নিবাস গড়ে তুলেছিলেন মণিপুররাজ। পরবর্তী কালে অনু মহাপ্রভুকে ঘিরে মন্দির ও রাজবাড়ি গড়ে উঠলে রাজপরিবারের অনেকেই নবদ্বীপে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। নবদ্বীপ শহরের দক্ষিণে একটি অঞ্চল বর্তমানে ‘মণিপুর’ নামে পুরসভায় নথিভুক্ত। রাজপরিবারের বহু মানুষ বংশানুক্রমে ওই এলাকায় বসবাস করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,রাজবাড়ির অন্যতম প্রবীণ সদস্য রাজকুমার রণজিৎ সিংহ এবং তাঁর ভাইপো রাজকুমার বিজয় সিংহ গত ২৩ এপ্রিল থেকে মণিপুরের ইম্ফলে আছেন। বিজয় আর এক রাজকুমার টিকেন্দ্রজিৎ সিংহের ছেলে। বুধবার টিকেন্দ্রজিৎ বলেন, “এই বছর মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের ২২৫তম তিরোভাব উৎসব বড় করে উদ্যাপন করা হবে। তার আয়োজন করতেই দাদা এবং আমার ছেলে মণিপুর গিয়েছেন। তবে ওঁরা ইম্ফলে নিরাপদেই আছেন।"
নবদ্বীপ মণিপুরের ব্যবসায়ী হরিওম আগরওয়ালের ছেলে দীপক ওরফে দেব আগরওয়াল এবং তাঁদের এক কর্মচারী অশোক দাস ব্যবসার কাজে মণিপুরে রয়েছেন। দীপক বা দেব সম্পর্কে টিকেন্দ্রজিতের ভাগ্নে। হরিওম বলেন, “ইম্ফলে আমাদের দোকান আছে। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা। এখনও অবধি কোনও অসুবিধা হয়নি ওদের। তবে আজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে আজ যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। ”
মণিপুর অশান্তি কিছুটা স্তিমিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সেনা নিয়ন্ত্রিত। ফলে চাইলেই ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে ফোন, ইন্টারনেট সব বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এখন ফোনে কথা বলতে পারছেন পরিবারের লোকেরা। টিকেন্দ্রজিৎ বলেন, "যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় ওরা চাইলেই ফিরে আসতে পারছে না। আবার আমরা এখান থেকে বিমানের টিকিট করে দেব সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।"
নদিয়ার সদর মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেন বলেন, “রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মণিপুরে আটকে পড়া রাজ্যের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। নবদ্বীপের চার জনের বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র দফতরকে তথ্য পাঠিয়েছি। জেলার আরও কেউ মণিপুরে আটকে আছেন কি না সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”