পদাতিক এক্সপ্রেস। — ফাইল চিত্র।
চলন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের বাতানুকূল কামরায় যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ল চোর। কিন্তু অভিযোগ, মালদহ স্টেশন ছাড়ার পর থেকে শিয়ালদহ পৌঁছানো পর্যন্ত কামরায় দেখা মিলল না আরপিএফ বা জিআরপি-র। বাধ্য হয়ে যাত্রীরাই চোরকে চাদর দিয়ে বেঁধে শিয়ালদহ পর্যন্ত নিয়ে এলেন!
বুধবার রাতে ডাউন পদাতিক এক্সপ্রেসের এই ঘটনা দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রী সুরক্ষাকে আরও এক বার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ওই ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব কার, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার আরপিএফ ও জিআরপির মধ্যে চলেছে দায় ঠেলাঠেলি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘বিষয়টি ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ তবে দূরপাল্লার ওই ট্রেনে কেন কোনও নিরাপত্তা কর্মী ছিল না, এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি রেল কর্তারা। যাত্রীরা জানিয়েছেন, ১২৩৭৮ ডাউন নিউ আলিপুরদুয়ার-শিয়ালদহ পদাতিক এক্সপ্রেস বুধবার রাতে নির্দিষ্ট সময়ে মালদহ স্টেশন ছাড়ে। অধিকাংশ যাত্রী তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। কামরার নাইট ল্যাম্পের মৃদু আলো। হঠাৎ বি-৩ কামরার মাঝামাঝি এক যুবককে লক্ষ্য করেন কয়েক জন যাত্রী। অভিযোগ, সে এক যাত্রীর মাথার পাশে থাকা মোবাইল নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তাকে পাকড়াও করেন যাত্রীরা। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় সিম কার্ডবিহীন দু’টি মোবাইল। ততক্ষণে চলন্ত ট্রেনের বি-৪,বি-৫ ও বি-৬ কামরায় চোর ধরা পড়ার খবর পৌঁছে যায়।
জানা যায়, যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল দু’টি বি-৬ কামরার যাত্রী উত্তর কলকাতার দমদমের বাসিন্দা রণবীর পালের। তিনি পরিবার নিয়ে দার্জিলিং থেকে কলকাতা ফিরছিলেন। রণবীরবাবুর স্ত্রীর কথায়, ‘‘দু’টি মোবাইলের পাশাপাশি একটি ছোট টাকার ব্যাগও চুরি হয়েছে। তাতে কিছু জরুরি নথিপত্র রয়েছে।মোবাইল ফেরত পেলেও, ওই ব্যাগ উদ্ধার হয়নি।’’
অভিযোগ, কামরার কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষক একাধিক বার আরপিএফ ও জিআরপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একের পর এক স্টেশন পার হলেও কোনও নিরাপত্তা রক্ষীর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। অগত্যা যাত্রীরাই ট্রেনের সাদা চাদর দিয়ে যুবককে বেঁধে রাখেন। শিয়ালদহ স্টেশনে তাকে জিআরপির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আরপিএফের পূর্ব রেলের বিভাগীয় নিরাপত্তা কমিশনার সিনিয়র (শিয়ালদহ) এম সুরেশ বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আরপিএফ মালদহের সঙ্গে কথা বলুন।’’ আবার বিভাগীয় নিরাপত্তা কমিশনার (মালদহ) অসীম কুমার কুল্লু বলেন, ‘‘নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রামপুরহাট স্টেশন পর্যন্ত ওই ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব এনজেপি জিআরপি-র।’’ কিন্তু এনজেপি জিআরপি-র আধিকারিক বিকে পালের দাবি, ‘‘বুধবার ডাউন পদাতিক এক্সপ্রেসের নিরাপত্তার দায়িত্ব রামপুরহাট জিআরপির হাতে ছিল।’’ শিয়ালদহ ডিভিশনের জিআরপি-র পুলিশ সুপার (এসআরপি) জে মার্সি আবার বলেন, ‘‘পদাতিক এক্সপ্রেসে নিরাপত্তার দায়িত্ব জিআরপির নয়, আরপিএফ-এর।"