চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। কোথাও উড়ালপুল নির্মাণের জন্য ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনের অভিমুখ। কোথাও আবার সড়ক পুকুরের চেহারা নিয়েছে। যান চলাচলে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ভোগান্তি। যার জেরে গত শুক্রবার রাতে সময় মতো হাসপাতাল পৌঁছতে না পেরে প্রাণ গিয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা এক অন্তঃসত্ত্বার।
রানাঘাটের আঁইশতলা মোড় থেকে কলকাতার দিকে মিশন রেলগেটের দূরত্ব ২.৭ কিলোমিটার। জাতীয় সড়কে এই পথেই এখন হয়েছে পদে-পদে বিপদ। প্রায় তিন কিলোমিটার পথে পৃথক চার জায়গায় 'ট্রাফিক পয়েন্ট' করে যানজট নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে পুলিশ। কিন্তু তাতেও ভোগান্তি এড়ানো যাচ্ছে না। সন্ধ্যা নামলেই জাতীয় সড়কে তীব্র যানজট নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে উঠেছে।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সঙ্গে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা হয়ে কলকাতার যোগাযোগের অন্যতম পথ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রতি দিন হাজার-হাজার যানবাহন চলাচল করে। নদিয়ার উত্তরে করিমপুর, পলাশি, তেহট্ট, চাপড়া ছাড়াও বহরমপুর ও মালদহ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে সঙ্কটজনক রোগী নিয়ে নিয়ে কলকাতার বড় হাসপাতালে যেতে রানাঘাটের ওই তিন কিলোমিটারে কালঘাম ছুটছে চালকদের।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে এক অন্তঃসত্ত্বাকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। দুই হাসপাতালের মধ্যে সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। অভিযোগ, রানাঘাটের জাতীয় সড়কে যানজট থাকায় প্রায় ঘণ্টাখানেক আঁইশতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স। পরে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতেই মহিলার মৃত্যু হয়।
প্রশ্ন উঠছে, দিনের পর দিন এই ভোগান্তি থেকে নিস্তার মিলবে কী ভাবে? যানজটের কারণে সময়ের রোগীকে হাসপাতালে না পৌঁছতে পারার দায় কার?
নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, "এই মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। যানজট সমস্যার উত্তর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষই দেবেন।" রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, "অন্তঃসত্ত্বা বা সঙ্কটজনক রোগীকে সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা খুবই জরুরি। জাতীয় সড়ক বেহাল থাকায় অনেক সময়ে রোগীদের নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।"
নদিয়া জেলা জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষের প্রকল্প আধিকারিক রাজ কুমার বলেন, "রানাঘাটে আঁইশতলা মোড় থেকে মিশন গেট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে একাধিক ডাইভারশন ও তিনটি উড়ালপুল নির্মাণ কাজ চলছে। তাই ওই অংশে যানজট সমস্যা তৈরি হচ্ছে।" চার মাসের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।