শহুরে পথ রাঙিয়ে বরণ নতুন বছরকে

দিনটা তাই অন্য ভাবে উদ্‌যাপন করার খেয়াল মাথায় চেপে বসেছিল রঘুনাথগঞ্জের বর্ণালি-সাধনা—ফুলিয়ায় শ’খানেক তাঁত শিল্পীর। রাত জেগে শহরের রাস্তা রাঙালেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৫
Share:

আলপনায়-জামদানি: শনিবার রাতে ফুলিয়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

পয়লা জানুয়ারি শহরে আতসবাজি ফাটে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ বন্দি হালখাতাতেই। দিনটা তাই অন্য ভাবে উদ্‌যাপন করার খেয়াল মাথায় চেপে বসেছিল রঘুনাথগঞ্জের বর্ণালি-সাধনা—ফুলিয়ায় শ’খানেক তাঁত শিল্পীর। রাত জেগে শহরের রাস্তা রাঙালেন তাঁরা। বছর শুরুর দিনে সেই পথ তারিফ কুড়োলো পথচারী, এমনকী পুরসভার কর্তাদের।

Advertisement

সাধনা বলেন, ‘‘হালখাতা সারতে প্রচুর মানুষ এ দিন শহরে আসেন। তাঁদের কাছে স্বচ্ছতার বার্তা দিতে আমরা এমন আয়োজন করেছিলাম।’’ ফুলিয়ার অভিনব বসাক বলছেন, “আলপনা শিল্পটাই আজ হারিয়ে যাওয়ার মুখে। অথচ এটা বাঙালির ঐতিহ্য। সেটাকে আমরা ধরে রাখতে চাইছি।” রঘুনাথগঞ্জের আশপাশে জনা কুড়ি ছেলেমেয়ে বছর আড়াই আগে গড়ে তুলেছিলেন একটি সংস্থা। তাতে বেশির ভাগই কলেজ পড়ুয়া। জনা পাঁচেক রয়েছেন চাকুরিজীবী। উদ্দেশ্য, বস্তির শিশুদের শিক্ষা ও বস্ত্রের সংস্থান করা। ওই সংস্থার কর্মীরা জানান, স্বচ্ছতা নিয়ে শিশুদের পাঠ দেওয়ার সময় শহরের রাস্তা রাঙানোর ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে। সাধনা পাল বলেন, ‘‘রাস্তায় নোংরা, থুতু, পানের পিক ফেলার স্বভাব যেন মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে। রঙিন রাস্তা দেখে এ সব ফেলতে সঙ্কোচ বোধ হবে অনেকের। তাই রাত জেগে দাদাঠাকুরের পণ্ডিত প্রেস থেকে রাঙিয়ে দিলাম কিছুটা পথ। এ কাজে শহরের এক ব্যবসায়ী প্রায় ২৫ লিটার রং দিয়েছেন। রঙিন রাস্তা অন্তত ছয় মাস অক্ষত থাকবে।” সংস্থার সদস্য পেশায় শিক্ষক সুমিত ঘোষ, তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী বর্ণালী দাস বলছেন, “বহু শিশু নিয়মিত স্কুলে যায় না। ভালমন্দ বোধটাও গড়ে ওঠেনি। তাদের নিয়ে জঙ্গিপুর স্টেশনের পাশেই একটি গাছের নীচে পাঠশালা শুরু করি। সপ্তাহে দু’দিন। বই-খাতা সবই দিই আমরা। হাত খরচটা এ ভাবেই কাজে লাগাই। স্বচ্ছতার পাঠ দিতে গিয়ে রাস্তা রাঙার ভাবনাটা মাথায় আসে।’’

অন্য দিকে, ফুলিয়ায় শনিবার রাত ১২টার পর থেকে প্রায় একশো জন তাঁত শিল্পী রাস্তা রাঙানো শুরু করেন। তাঁদের অনেকেই শাড়িতে নকশা তুলে সুনাম অর্জন করেছেন। এর আগে তাঁরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলপনা এঁকেছিলেন। প্রায় ২৬০০ মিটার। এ বারে আড়াইশো মিটার আলপনা আঁকা হয়েছে।

Advertisement

রাঙা রাস্তা দেখে জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “ওই সংস্থার এই ভাবনাকে আমরুট প্রকল্পে শহর সৌন্দর্যায়নে কাজে লাগানো হবে।” রঘুনাথগঞ্জ থানার আইসি সৈকত রায় বলছেন, “টহলদারি দেওয়ার সময় রাস্তায় কিছু ছেলেমেয়েকে আলপনা আঁকতে দেখে থমকে গিয়েছিলাম। সৌন্দর্য বাড়াতে এ ভাবে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। এই কাজে পুলিশ পাশে থাকবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement