আসনে সংরক্ষণ তোলার দাবি জঙ্গিপুর কলেজে

বিএ প্রথম বর্ষের অনার্সে ফাঁকা পড়ে থাকা সংরক্ষিত আসনগুলিতে সাধারণ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠল জঙ্গিপুর কলেজে। সোমবার প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা। বিক্ষোভের খবর পেয়ে কলেজে ছুটে আসে পুলিশও। তবে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেই পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৮
Share:

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও টিএমসিপি-র। —নিজস্ব চিত্র

বিএ প্রথম বর্ষের অনার্সে ফাঁকা পড়ে থাকা সংরক্ষিত আসনগুলিতে সাধারণ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠল জঙ্গিপুর কলেজে। সোমবার প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা। বিক্ষোভের খবর পেয়ে কলেজে ছুটে আসে পুলিশও। তবে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেই পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। সদ্য জঙ্গিপুর কলেজে দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সপ্তাহ না কাটতেই এ দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেও জঙ্গিপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নবকুমার ঘোষ অবশ্য বলছেন, “এই দাবি যথেষ্ট যুক্তিসম্মত। কলেজে ১৩টি বিষয়ে অনার্সে তফশিলি জাতি, উপজাতি, প্রতিবন্ধী ও ওবিসির জন্য সংরক্ষিত হয়ে এখনও অন্তত ৩০টি আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। প্রতি বছরই এমন ঘটে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই।” কেন? তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের অনগ্রসর জাতি কল্যাণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বহু বার। ওই দফতরের কর্তারা জানিয়েছিলেন, দফতরের অনুমতি নিয়ে একাধিক বার বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তারপরেও সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী না পাওয়া গেলে তারপরে অনুমতি দেওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করবে সংশ্লিষ্ট ওই দফতর। এটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবুও কলেজের তরফে এ বছর ফের জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে পাঠানো হবে।

Advertisement

তৃণমুল ছাত্র পরিষদের জঙ্গিপুর কলেজ কমিটির আহ্বায়ক রনি খান বলেন, “কলেজে অনার্স চেয়ে ঘুরছেন বহু সাধারণ ছাত্রছাত্রী। অথচ সংরক্ষিত আসনগুলি বছরের পর বছর ফাঁকাই পড়ে থাকছে। জঙ্গিপুর কলেজ কর্তৃপক্ষও স্বীকার করছেন যে, আসনগুলি ফাঁকা ফেলে না রেখে আগ্রহী সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের দ্বারা পুরণ করা উচিত। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতর এ ব্যাপারে তৎপর নন বলেই বঞ্চিত হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা।” রনির দাবি, “জয়েন্টে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সংরক্ষিত কোনও আসন ফাঁকা ফেলে রাখা হয় না। সেখানে ভর্তির নিয়মে সরকারি নির্দেশিকা জারি করে বলা রয়েছে, তফশিলি উপজাতির আসন খালি থাকলে তা পাবে তফশিলি জাতির প্রার্থীরা। তাতেও আসন খালি থাকলে তা পাবে অসংরক্ষিত জাতির সাধারণ প্রার্থীরা। প্রতিবন্ধী প্রার্থী না মিললে সেই আসনও পাবে অসংরক্ষিত জাতির সাধারণ প্রার্থীরা। এই হিসেবে এ বছর মেডিক্যালে প্রায় ২০০ আসন গিয়েছে সাধারণ শ্রেণির প্রার্থীদের জন্য। উচ্চ শিক্ষায় এই ব্যবস্থা রাজ্যের সব কলেজেই চালু করতে হবে।”

সংরক্ষিত আসনে ভর্তি না হওয়ায় জেলার কলেজগুলিতে অনার্সে অন্তত ৪০০ আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অরঙ্গাবাদ ডি এন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাধব বিশ্বাস বলেন, “আমাদের কলেজে ৭ টি বিষয়ে অনার্স আছে। তবু বছরের পর বছর সংরক্ষিত বহু আসন ফাঁকা থেকে যায়। এর আগে জেলা প্রশাসনের কাছে বহু আবেদন করা হয়েছে। কোনও ফল হয়নি। তাই প্রতি বছরই অন্তত ২০-২২টি আসন ফাঁকাই পড়ে থাকে। অথচ এই আসনগুলিতে কিছু সাধারণ ছেলে মেয়ে ভর্তি হতে পারে।” ফরাক্কা কলেজের অধ্যক্ষ শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কলেজে সব মিলিয়ে তফশিলি জাতি, উপজাতি ২২.৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ২ শতাংশ, ওবিসির দুই বিভাগে ১৫ শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। আমাদের কলেজে সমস্যা প্রকট না হলেও কিছু আসন তো খালি থেকেই যায়।”

Advertisement

সাগরদিঘি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ী বলেন, “সংরক্ষিত আসন কোনও বছরই পূরণ হয় না এই কলেজে। গত বছর ৪টি অনার্স বিষয়ে খালি পড়ে থাকা ২০টি আসনে সাধারণ ছাত্রদের ভর্তির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম জেলার অনগ্রসর জাতি কল্যাণ দফতরে। ওই দফতর যা পরামর্শ দিয়েছে তা মানতে গেলে পাক্কা ৬ মাস সময় লাগবে। কলেজের বাস্তব অবস্থাটা প্রশাসনের কর্তারা ভাবেনই না। তাই প্রতি বছর সংরক্ষিত আসনগুলো ফাঁকা থাকছে। সাধারণ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।”

তৃণমুলের কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি ভাস্কর মহানায়ক বলেন, “জেলার ২৬টি কলেজে গড়ে প্রায় ৪০০ অনার্সের আসন সংরক্ষণের গেড়োয় ফাঁকা পড়ে থাকছে। জেলায় এটা বাস্তব সমস্যা। এ বিষয়ে জেলার অনগ্রসর জাতি কল্যাণ দফতরের বিভাগীয় অফিসারের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু সরকারি দফতরের যা নিয়ম রয়েছে সেটাও খুব দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল। ফলে আসনগুলি খালিই পড়ে থাকছে। অনার্সের মতো উচ্চ শিক্ষায় এত আসন ফাঁকা থাকা কোনওমতেই উচিত নয়। এ ব্যাপারে রাজ্য পর্যায়ে জয়েন্টের মাধ্যমে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভর্তির যে ব্যবস্থা রয়েছে সেটা কী ভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে সাংগঠনিক স্তরে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”

অনগ্রসর জাতি কল্যাণ বিভাগের জেলা অধিকারিক রঞ্জন দাস অবশ্য এই সমস্যার কথা মানতেই রাজি নন। তিনি বলেন, “এ জেলায় যথেষ্ট সংখ্যায় তফশিলি জাতি, উপজাতি, ওবিসি পড়ুয়া রয়েছেন। অথচ কলেজগুলো ছাত্র পাচ্ছে না, এটা আমরা মানতে পারছি না। আসলে কলেজগুলি এটা নিয়ে ঠিক মতো প্রচার করছে না। তাই সংরক্ষিত আসন ফাঁকা থাকছে। গাফিলতিটা কলেজের। এতে আমাদের করার কিছুই নেই। তবে সরকারি নির্দশিকা মেনে কোনও কলেজ আবেদন করলে তখন তদন্ত সাপেক্ষে বিবেচনা করে দেখা হবে।” ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সংরক্ষিত আসনে ফাঁকা রয়েছে এই মর্মে একটি নোটিস জমা দিতে হবে অনগ্রসর জাতি কল্যাণ দফতরে। ওই দফতর অনুমতি দিতে সেই নোটিস কলেজের তিন বার টাঙাতে হবে। তারপর তা প্রচারের জন্য রেডিও এবং একাধিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তারপরেও ছাত্রছাত্রী না পাওয়া গেলে বিবেচনা করবে ওই দফতর।”

তবে কলেজ কর্তপক্ষের একাংশ ও ভাস্করবাবু বলছেন, “কলেজের বাস্তব সমস্যাটা ওই দফতর জানে না বলেই কলেজের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে। এই পদ্ধতি সরলীকরণ না করলে সমস্যা মিটবে না।”

তবে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “কোনও কলেজ যদি এই বিষয়ে জেলার অনগ্রসর কল্যাণ দফতরে আবেদন করে থাকে তাহলে আমাকে জানালে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। ভর্তির আগে অন্তত সপ্তাহ দু’য়েক সময় পেলে আশা করছি কলেজগদুলির এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement