প্রহৃত: বিউটি বিবি। নিজস্ব চিত্র
প্রতিবেশীদের নিদান না শোনায় রীতিমতো মারধর খেতে হল এক তরুণীকে। ওই তরুণীর মা ও ভাই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিবেশীদের দাবি, পরিযায়ী না হওয়ার সত্ত্বেও মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে কোয়রান্টিনে যেতে হবে বিউটিবিবিকেও। বিউটিবিবি তাতে রাজি হননি। তাতেই তাঁকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল পাঁচ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুর নাগাদ লালগোলার শিকারপুরে। ঘটনার পরে প্রতিবেশী রাহুল শেখ, রোহন শেখ, ফুলন বিবি, সাকিনা খাতুন ও সামিমা বিবির বিরুদ্ধে লালগোলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও অভিযুক্তদের মধ্যে কাউকেই এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আক্রান্ত মহিলা ও অভিযুক্তরা সকলেই লালগোলার শিকারপুরের বাসিন্দা। আক্রান্ত বিউটি বিবির ভাই ও মা দু’জনেই দিল্লিতে থাকেন। দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন বিউটিবিবির ভাই। লালগোলায় বিউটিবিবি ও তাঁর স্বামী থাকেন। গত রবিবার নিজেদের উদ্যোগে বাড়ি ফেরেন বিউটি বিবির ভাই ও মা।
তারপর তাঁরা দু’জনেই লালগোলা কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে আলাদা জায়গায় কোয়রান্টিনে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আক্রান্তের মা ও ভাই। অভিযোগ, এমন সময় অভিযুক্ত ওই পাঁচ প্রতিবেশী নিদান দেন, বিউটি বিবি যেহেতু তাঁর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাই তাঁকেও আলাদা জায়গাতে কোয়রান্টিনে যেতে হবে।
গ্রামের কিছু মানুষের কথায়, করোনাভাইরাস পরিযায়ী শ্রমিকদের যে হচ্ছে, তা তো লুকোনোর কিছু নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজনরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সাবধান হতে বলাটা কোনও খারাপ কিছু নয়। তা বলে, গ্রামবাসীদের একাংশ পরিষ্কারই জানাচ্ছেন, তা বলে কোনও মহিলাকে এমন মারধর করা একেবারেই উচিত হয়নি। মারের চোটে চোখের পাশে ও পা কেটে গিয়েছে, ঘারে ও পিঠেও চোট পেয়েছেন তিনি।
তবে বিউটির অভিযোগ, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এ দিন বিউটি বলছেন, ‘‘থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু অভিযুক্তরা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেরাচ্ছে বলে বেরাচ্ছে ওদের নাকি কেউ কিছু করতে পারবে না।’’
স্থানীয় বাসিন্দা তথা বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর সংসদের সদস্য সিপিএমের পার্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা খুব বাজে ভাবে বিউটিকে মেরেছে। কিন্তু এখানে পুলিশের ভূমিকা দেখে অবাক হচ্ছি। দোষীরা বুক ফুলিয়েই ঘুরছে।’’ এ দিন জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে।’’