প্রতীকী ছবি
হায়দরাবাদ-কাণ্ড উস্কে দিচ্ছে দগদগে সব স্মৃতি! মুর্শিদাবাদের আনাচকানাচে ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের পরে খুনের ঘটনা নেহাত কম নেই। নির্যাতিতাদের পরিবারের কেউ এখনও বিচারের আশায় আদালত আর বাড়ি চরকিপাক দিচ্ছেন, কেউ আবার এলাকায় অভিযুক্তদের বুক ফুলিয়ে ঘুরতে দেখে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছেন।
বছর পাঁচেক আগে রানিতলা এলাকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে গ্রামেরই চার যুবকের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পরে দুষ্কৃতীরা ওই কিশোরীকে খুন করে ফেলে রেখেছিল পাটখেতে। তার শরীরের বেশ কিছু অংশ শেয়ালে খুবলে খেয়েছিল। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। তবে পরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।
ওই কিশোরীর দাদা বলছেন, ‘‘অপরাধীরা এখন প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। আমরা শুধু আদালত আর বাড়ি করছি। আর কত দিন এই তারিখের পর তারিখ চলবে, কে জানে! হায়দরাবাদের এনকাউন্টারের খবরে খুশি হয়েছি। ধর্ষকদের এ ভাবেই শাস্তি দেওয়া উচিত।’’
বছর চারেক আগে ইসলামপুরে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছিল তাঁর পরিবার। সেই সময় অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হলেও পরে তারা জামিনে মুক্তি পায়। বছর খানেক আগে রানিনগরে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর খুনের অভিযোগ ওঠে তিন যুবকের বিরুদ্ধে। ওই দুই নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যেরা বলছেন, ‘‘সমস্ত ধর্ষণের শাস্তি হায়দরাবাদের মতোই হওয়া উচিত।’’
ধর্ষণের মামলার বিলম্বিত বিচার বা অভিযুক্তদের ছাড়া পাওয়ার ঘটনাকে বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা বলে মানতে রাজি নন জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা। তাঁর মত, ‘‘আদালতে বিচারকের সামনে অভিযোগ তুলে ধরার ক্ষেত্রে যেমন পুলিশের গাফিলতি রয়েছে, তেমনই রয়েছে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার অভাব। ফলে আদালতে গিয়ে অনেক সময় ভয়ে সত্যি কথা বলতে পিছিয়ে যান নির্যাতিতা।” সাগরদিঘিতে এক আদিবাসীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে চার যুবকের বিরুদ্ধে। পুলিশ ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে চার জনকেই গ্রেফতার করে। কিছুদিন পরে মারা যান ওই কিশোরীর বাবা। অসহায় হয়ে পড়ে কিশোরী ও তার পরিবার। মামলার শুনানি শুরু হতেই আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের চিনতে অস্বীকার করে কিশোরী। গণধর্ষণের অভিযোগ থেকে চার অভিযুক্তই মুক্তি পেয়ে যায়। সাগরদিঘিতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তার গৃহশিক্ষকের বিরুদ্ধে। পুলিশ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়। আদালতে ওই শিক্ষকের আইনজীবী দাবি করেন, ওই ছাত্রী প্রাপ্তবয়স্কা এবং তার সম্মতিতেই সহবাস। এটা ধর্ষণের মামলা নয়। সেই মামলায় বিচারকের পর্যবেক্ষণ, তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ধর্ষিতা কিশোরী নাবালিকা কিনা সেই পরীক্ষা করাননি। তারই সুযোগ নিচ্ছেন অভিযুক্ত। বিচারক মামলার রায়ে সরাসরি শিক্ষককে অভিযুক্ত করেও তিনি যে তাঁকে শাস্তি দিতে পারলেন না, তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেন। তদন্তকারীর গাফিলতির কারণে যে অভিযুক্তকে খালাস দিতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন, রায়ে তারও উল্লেখ ছিল। বিচারক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে তৎকালীন পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। অশোকবাবু বলছেন, “সেই অফিসারের শাস্তি হয়েছিল কি না জানা নেই। তবে দু’টি ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা সত্ত্বেও অভিযুক্তরা যে খালাস পেয়ে গিয়েছে পুলিশি গাফিলতি ও ধর্ষিতার পরিবারের নিরাপত্তার অভাবের কারণে সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’