—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লাগাম ছাড়াল শব্দবাজি। সঙ্গে ডিজের তাণ্ডবে বর্ষবরণের আনন্দের নামে রানাঘাট শহর ও পাশ্ববর্তী গ্রামীণ এলাকাতেও চলল নিয়ম ভাঙার উৎসব। শব্দবাজি থেকে ডিজে নিয়ে নির্দিষ্ট আইন থাকলেও তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলল উৎসব পালন।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জানলা-দরজা বন্ধ করেও রেহাই মেলেনি শব্দের দাপট থেকে। অনেকে সন্তানকে কোলে নিয়েই রাত জেগেছেন। কেউ আবার সহ্য করতে না পেরে রাতেই সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, ‘এবার অন্তত বন্ধ হোক শব্দবাজির বেলাগাম ব্যবহার’। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ নির্বিকার না থাকলে শব্দদৈত্যের এমন বাড়বাড়ন্ত কিছুটা হলেওএড়ানো যেত।
সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, বর্ষবরণে রাতে ১২টা থেকে মাত্র ১৫ মিনিট শুধু আলোর বাজি বা সবুজ বাজি ব্যবহার করা যাবে। শব্দবাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উল্টো ছবি। মঙ্গলবার ২০২৪-এর শেষ রাতে ১২টার আগে থেকেই রানাঘাট, হবিবপুর, ধানতলা, আনুলিয়া, গাংনাপুর ইত্যাদি শহর ও গ্রামী এলাকা জুড়ে শব্দবাজি ফাটল নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে। বৃদ্ধ বাবাকে গত মঙ্গলবার রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন গাংনাপুরের বাসিন্দা সূর্য মিত্র। রাতে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, "রাত ১২টা থেকে শব্দবাজির যে তাণ্ডব শুরু হল তাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীই ঘুমোতে পারেননি। হাসপাতালের বাইরের রাস্তাতেও দেদার শব্দবাজি ব্যবহার হয়েছে। হাসপাতাল বলে কোনওরকম রেয়াত করা হয়নি।"
রানাঘাটের শহরের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা তনয়া মজুমদার দু’মাসের মেয়েকে কয়েকদিন আগে বাপের বাড়িতে এসেছেন। তিনি বলেন, "নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে নানা উৎসব, আয়োজন হতেই পারে। কিন্তু যে ভাবে রাত ১২টা নাগাদ বিরামহীন শব্দবাজি ব্যবহার হয়েছে তা ভাবা যায় না। মানুষ আর কবে বুঝবে! বাজির প্রচণ্ড শব্দে রাতে বারবার মেয়ে কেঁদে উঠেছে। সারারাত মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে না ঘুমিয়েই কেটেছে।" শহরের প্রবীণদের কথায়, "শুধু শব্দবাজি নয়, বর্ষবরণের রাতে লাগাম ছাড়ায় ডিজে’র ব্যবহারও।"
প্রশ্ন উঠছে, বর্ষবরণের আগে খোলা বাজারে এত বাজি চলে এলকী ভাবে?
বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, কালীপুজোর সময় অনেক বাজি বিক্রি হয়নি। সেগুলোই এখন বিক্রি হয়েছে। দুর্গাপুজো বা দীপাবলীর আগে বাজারগুলিতে পুলিশের নজরদারি থাকলেও বর্ষবরণের আগে সেই নজরদারি ছিল না বলে অভিযোগ অনেকের। রানাঘাট পুলিশ জেলা সুপার কুমার সানি রাজ-কে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। এসএমএস করা হলেও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, "যখন যেমন অভিযোগ এসেছে, সেইমত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’