শিলাবৃষ্টি: সুতিতে। নিজস্ব চিত্র
ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে মিনিট দশেকের শিলাবৃষ্টিতে ফের ক্ষতির মুখে মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু এলাকার চাষআবাদ। শুক্রবার বিকেলে জেলা জুড়েই হালকা বৃষ্টি হয়েছে। তবে সুতি, ডোমকল, ইসলামপুর ও রানিনগর ব্লক এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে সব্জির পাশাপাশি আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
নদিয়াতে অবশ্য এ দিন সে ভাবে ঝড়-বৃষ্টি না হলেও দিন কয়েক আগে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পর পর দু’দিনের বৃষ্টিতে অনেকটা নিশ্চিন্ত নদিয়ার পাটচাষিরা। হবে নাই বা কেন? সেই ফাল্গুনের শেষ থেকে এমনই আকাশভাঙা বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলেন পাটচাষিরা। কিন্তু চৈত্র দূর অস্ত, বৈশাখের প্রথম দিকেও সে ভাবে কালবৈশাখী বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
পাট চাষে সাধারণ ভাবে ব্যবহার করা হয় ‘নবীন’ প্রজাতির বীজ। জমিতে সেই পাট বীজ ছড়ানোর জন্য চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে মাঝ বৈশাখ হল আদর্শ সময়। দিনে ঝাঁজালো রোদ্দুর। বিকেলের দিকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি। এমন আবহাওয়াই জমিতে পাট বোনার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এ বারে মাঝ বৈশাখের আগে দেখা মেলেনি বৃষ্টির। ফলে চাষের বেলা গিয়েছে বয়ে। কিন্তু মাঠে পাটের বীজ ছড়ানোই শুরু করতে পারেননি কৃষকেরা।
নদিয়ায় মরসুমের প্রথম বড় কালবৈশাখী হয়েছিল এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে। তবে সে বার ঝড়ের তুলনায় বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। পাটচাষিদের তেমন উপকার তো হয়নি, বরং ঝড়ের দাপটে শুয়ে পড়েছিল মাঠের পাকা বোরো ধান। তারপর থেকেই নিয়ম করে জেলায় ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর থেকেই অসহ্য গুমোট গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বিকেল হলেই আকাশ কালো করে মেঘ পাকিয়ে উঠছে। এলোমেলো ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে আছড়ে পড়ছে কালবৈশাখী। কমবেশি বৃষ্টিও হচ্ছে। ২৭ এপ্রিলের তুমুল শিলাবৃষ্টিতে ধানের সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে আম, কলা, পেঁপে এবং লিচুর।
এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে খুশি পাটচাষিরা। নদিয়ার হোগলবেড়িয়ার পাটচাষি স্বপন মণ্ডল, শঙ্কর মণ্ডলেরা জানাচ্ছেন, এই বৃষ্টি আরও আগে হওয়ার দরকার ছিল। কেননা দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক পাটচাষিই এ বছরে আর পাটচাষ করছেন না।
গত রবিবার ও সোমবার কালবৈশাখীর ব্যাপক তাণ্ডবে জঙ্গিপুরের সাগরদিঘি ও ফরাক্কায় ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আম ও লিচুর এতটাই ক্ষতি হয়েছে যে ফরাক্কার বাগান মালিকেরা ইতিমধ্যেই বিডিও-র কাছে সরকারি সাহায্যের আবেদন করেছেন।
জঙ্গিপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা উত্তম কোনাই জানান, এ দিনের শিলাবৃষ্টিতে কিছু এলাকায় পাট চাষে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। রানিনগর ব্লকের কৃষি আধিকারিক মিঠুন সাহা জানান, ব্লকের কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে পাটের ভালই ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে পটল, করলা, লঙ্কারও।
তবে নদিয়াতে অবশ্য ছবিটা একটু অন্য রকম। কৃষি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ জেলায় যা বৃষ্টি হচ্ছে তাতে পাটের পাশাপাশি উপকার হবে তিল, মরসুমি সব্জি ও আমের। টানা রোদের পরে দফায় দফায় ঝড়ে আমচাষিরা যখন রীতিমতো চিন্তায় ছিলেন, তখনই এই বৃষ্টিতে তাঁরাও স্বস্তিতে।
তবে এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে বোরোচাষিরা। প্রায় সর্বত্রই মাঠে মাঠে পাকা বোরোধান কাটার অপেক্ষায়। কিন্তু সেই ধান কেটে ঘরে তোলার আগেই তা বৃষ্টির কবলে পড়ল। নদিয়ার কাঁঠালিয়ার বোরোচাষি সমীর বিশ্বাসের কথায়, ‘‘দিন কয়েকের মধ্যে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে বোরোচাষের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”