জমিদাতার অনিচ্ছায় থমকে রেল 

নবদ্বীপ থেকে শিয়ালদহ পৌঁছনোর জন্য এখনও তিনটি ট্রেন বদল করতে হয়। একটি ট্রেনে ব্যান্ডেল, সেখান থেকে নৈহাটি। সেখান থেকে আবার ট্রেন বদলে শিয়ালদহ। প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তা ছাড়া, এত বার ট্রেন বদল মোটেই সুবিধাজনক পন্থা নয়। তাড়া থাকলে বা অসুস্থ মানুষকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে অত্যন্ত সমস্যায় পড়েন মানুষ।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মহিশুরা পঞ্চায়েতের অনিচ্ছুক জমি মালিকদের প্রতিবাদ ও বাধায় এক ট্রেনে নবদ্বীপধাম থেকে শিয়ালদহ পৌঁছনোর বহু-চর্চিত প্রকল্প মাঝপথে থমকে গিয়েছে।

Advertisement

নবদ্বীপ থেকে শিয়ালদহ পৌঁছনোর জন্য এখনও তিনটি ট্রেন বদল করতে হয়। একটি ট্রেনে ব্যান্ডেল, সেখান থেকে নৈহাটি। সেখান থেকে আবার ট্রেন বদলে শিয়ালদহ। প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তা ছাড়া, এত বার ট্রেন বদল মোটেই সুবিধাজনক পন্থা নয়। তাড়া থাকলে বা অসুস্থ মানুষকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে অত্যন্ত সমস্যায় পড়েন মানুষ।

গঙ্গার উপর দিয়ে সেতু গড়ে পশ্চিম পারের নবদ্বীপের সঙ্গে পূর্ব পারের কৃষ্ণনগরকে যুক্ত করে এক ট্রেনে সোজা শিয়ালদহ আসার স্বপ্ন নবদ্বীপের বেশির ভাগ বাসিন্দাই দীর্ঘদিন ধরে লালন করছেন। এলাকার অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নতিতেও তা ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে শিয়ালদহে। কিন্তু স্বপ্নপূরণের খুব কাছাকাছি এসেও প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে জমি অধিগ্রণ সংক্রান্ত জটিলতায়।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গঙ্গার উপরে রেল ব্রিজও তৈরি হয়ে গিয়েছে। পূর্ব পারেও কোনও সমস্যা নেই। শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর জংশন এবং কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ ব্লকের আমঘাটা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনের কাজ সম্পূর্ণ। কিন্তু পশ্চিম পারে রেল ব্রিজ থেকে নেমে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় রেললাইন পাতার কাজ বাকি। এই লাইন দিয়েই রেল ব্রিজের সঙ্গে যুক্ত হবে নবদ্বীপধাম স্টেশন। এই পাঁচ কিলোমিটার পথেই জমি অধিগ্রহণে গোল বেঁধেছে।

এই অংশ নবদ্বীপ ব্লকের মহিশুরা পঞ্চায়েতের গদখালি মৌজা এবং তেঘড়ি মৌজার অন্তর্গত। যার মধ্যে রয়েছে কিছু তিন ফসলি আবাদি জমি, শতাধিক বাসিন্দার পৈতৃক বসতবাড়ি। তাই রেলপথের জন্য জমি দিতে কোনও মতেই রাজি নন মহিশুরার বাসিন্দারা। গ্রামের মানুষের যুক্তি, বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে যে জমির উপরে নির্ভর করে তাঁদের দিন কেটেছে, সেই জমি কোনও ভাবেই ছাড়বেন না তাঁরা। বসতবাড়ি ছেড়েও যাবেন না। এ জন্য খবরের কাগজে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেই তাঁরা নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে এসেছেন জেলা প্রশাসনের কাছে।

মহিশুরা গ্রামের মুক্ত মণ্ডল, রাজু শেখরা জানান, তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। কারণ, এই জমি গেলে তাঁদের চাষের জমি চলে যাবে, বসতবাড়ি চলে যাবে। তাঁরা কর্মহীন, গৃহহারা হবেন। ওই জমিতে তাঁত বা অন্য ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসা চালানো মানুষজনের ভবিষ্যৎও এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

গত মার্চ মাসে অনিচ্ছুক জমিদাতাদের শুনানিতে ডেকে পাঠায় জেলা প্রশাসন। তার পর ৮ আগস্ট হঠাৎ প্রশাসনের তরফে জমি মাপা শুরু হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষের প্রবল বাধার সামনে পড়ে কর্মীদের ফিরতে হয়। দুর্গাপুজোর মুখে সকলকে নিয়ে ফের আলোচনায় বসা হয়। ছিলেন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পদাধিকারী, এলাকার বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান প্রমুখরা। কিন্তু সে দিনও জমি দিতে অনিচ্ছুকদের প্রবল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, এর পর জেলা প্রশাসন এক তরফা ঘোষণা করে, ১৪ নভেম্বর ফের জমি মাপা হবে। কিন্তু সে দিনও মানুষের আপত্তিতে জমি মাপা সম্ভব হয়নি।

গত ৭ ডিসেম্বর এলাকায় প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার করা হয়, রেললাইন পাতার জন্য ১২ ডিসেম্বর জমি মাপা হবে হবে। এ নিয়ে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। পরের দিন দুপুরে পশ্চিম পারে রেল সেতু থেকে ২৩৫ মিটার জায়গার জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পূর্ণ হয়। এর পরেই হল মহিশুরার অনিচ্ছুকদের জমি। সেখানে কাজ থামিয়ে দিতে হয়। গ্রামের মানুষের দাবি, প্রস্তাবিত রেলপথকে কিছুটা ঘুরিয়ে দিলেই সেটি তুলনায় কম উর্বর জমির উপর দিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের উর্বর জমি ও বসতবাড়ি হারানোর ভয় থাকবে না। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, ‘‘খুব সামান্য মানুষ জমি দিতে অনিচ্ছুক। তাঁদের কিছু লোক ভুল পথে চালিত করছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘জমিদাতাদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তার পরেও তাঁরা অনিচ্ছুক হলে বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা হবে।’’ নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তও বলেন, “যাঁরা জমি দিতে অনিচ্ছুক তাঁদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করব। বেশির ভাগ মানুষ অনিচ্ছুক হলে বিকল্প কোনও উপায়ের কথা নিশ্চয়ই ভাবা হবে।” পূর্ব রেলের জনসং‌যোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি এই পদে নতুন। খোঁজ নিচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement