—প্রতীকী চিত্র।
ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে হবে। তারা পড়াশোনা করে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য ছুটে চলেছেন অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয়, পরীক্ষায় ভাল ফল করতে হবে, ভাল জায়গা পেতে হবে— এমন আশায় পড়াশোনায় খরচ করতে তাঁরা পিছপা হন না। বাবা-মা যতই দরিদ্র হোন না কেন, তাঁদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনার পিছনে যথাসম্ভব খরচ করার চেষ্টা করেন। বাবা মায়ের একটাই চাহিদা পরীক্ষায় ভাল ফল আনতে হবে। তবে পড়ুয়ারা কী শুধু ভাল ফলের পিছনে ছুটছে? না মূল্যবোধ, নৈতিকতার শিক্ষাও পাচ্ছে? বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র-ছাত্রীরা সমানাধিকার পাচ্ছে তো?
আর জি করের ঘটনা সামনে আসতে এ ধরনের নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, নৈতিকতা, মূল্যবোধের অধঃপতন ক্রমে ঘটে চলেছে। বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় ভাল ফল করার থেকেও ভাল মানুষ হওয়া জরুরি, এ শিক্ষাও পড়ুয়াদের বিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়। তবে শুধু বিদ্যালয় নয়, বাড়ি থেকেও নৈতিকতা মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে।
বহরমপুরের হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমানাধিকারের প্রশ্নে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের অধিকার বরং বেশি দেওয়া হয়। তাদের সুরক্ষার কথা ভেবে ছাত্রীদের প্রতি বেশি নজর দেওয়া হয়। অন্ততপক্ষে বিদ্যালয়ের পরিবেশে ছাত্রীদের অধিকার বেশি দেওয়া হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখনও অনেক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা শ্রেণিকক্ষে বসতে দেওয়া হয়, আবার একই শ্রেণিকক্ষে একদিকের বেঞ্চে ছাত্রীদের, অন্যদিকের বেঞ্চে ছাত্রদের বসতে দেওয়া হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে একই শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীরা যার যেখানে ইচ্ছা, সে সেখানে বসতে পারে। ছাত্রের পাশে বসে ছাত্রী ক্লাস করছে এ চিত্র আমাদের বিদ্যালয়ে দেখা যায়। নারী পুরুষের যে আলাদা কিছু নেই সেটা বোঝাতেই আমরা এটা করেছি। শুধু তাই নয়, নারী দিবসের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে নানা সময়ে সমানাধিকার, মূল্যবোধ, নৈতিকতার শিক্ষাও দেওয়া হয়।’’
পড়াশোনায় ভাল নাকি ভাল মানুষ, কোনটা হওয়া বেশি জরুরি? বহরমপুরের সেবামিলনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অদিতি ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে আমরা চাই, ছাত্র-ছাত্রীরা আগে ভাল মানুষ হোক। ক্লাসে পাঠদানের সময় নানা আলোচনায় ওদের বারবার সে কথা বলি। সমাজে ভাল মানুষকে সম্মান জানানো, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে ওদের সামনে উদাহরণ তৈরি করার দায়িত্বও আমাদের। স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ুয়ারা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের সম্মান-প্রতিপত্তি দেখে বিভ্রান্ত হয়। ভাল মানুষ সমাজে সম্মান পেলে আর খারাপ মানুষ নিন্দিত হলে পড়ুয়ারাও সু-পথে চালিত হবে।’’
মহিলাদের সমানাধিকারের বিষয়টি কি স্কুলেই পড়ুয়াদের শেখানো উচিত? অদিতি বলেন, ‘‘অভিভাবকদের জানা প্রয়োজন, তাঁদের মেয়ে বাজার করতে পারবে না, ব্যাঙ্কের কাজ করতে পারবে না, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আবার স্কুলে কোনও অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় বেঞ্চ সরানো বা অন্য কাজ শুধু ছেলেরাই বা কেন করবে! মেয়েদের দিয়েও সে সব করানো উচিত। ছেলে-মেয়ে সমান, এই বার্তা স্কুলজীবন থেকে ছাত্রছাত্রীর মনে গেঁথে দিতে হবে।’’
রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের জোতকমল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভাবেই পার্থক্য করা হয় না। ছাত্রছাত্রীদের একই শ্রেণিকক্ষে বসানো হয়। সেই সঙ্গে বছরভর তাদের নারী পুরুষ সমানাধিকারের শিক্ষা দেওয়া হয়, নৈতিকতা, মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া হয়।’’