New Education Policy

প্রশ্ন অনেক নব মূল্যায়নে

পড়ুয়াদের সামগ্রিক মূল্যায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সুপারিশ মোতাবেক রাজ্যে চালু হচ্ছে ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৪০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ হল মার্কশিটের যুগ। নতুন ক্লাসে ওঠার ছাড়পত্র হিসাবে এই শেষবার ‘উত্তীর্ণ’ লেখা মার্কশিট হাতে পেল পড়ুয়ারা। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে পড়ুয়ারা হাতে পাবে ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’ বা সার্বিক প্রগতি নিদর্শন পত্র। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের মূল্যায়নের পদ্ধতিও। বাড়ছে পরীক্ষার মোট নম্বরের পরিমাণ। যার ফলে পড়ুয়াদের উপর চাপ বাড়বে বলেই মনে করছেন শিক্ষামহল। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে যখন চালু শিক্ষাবর্ষের মধ্যে পড়ুয়াদের বোঝা হালকা করতে সিমেস্টার ভিত্তিক পাঠক্রমের পুনর্মূল্যায়ন করা হল তখন নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের উপর চাপ বাড়ানো কতটা যুক্তিযুক্ত?

Advertisement

পড়ুয়াদের সামগ্রিক মূল্যায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সুপারিশ মোতাবেক রাজ্যে চালু হচ্ছে ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’। জানা গিয়েছে ২০২৫ সাল থেকে গোটা দেশে একই ধরনের সার্বিক প্রগতি নিদর্শন পত্র চালু করতে চায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। যাতে একজন পড়ুয়ায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি ক্লাসের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে তার শারীরিক, মানসিক, বৌদ্ধিক, জ্ঞানমূলক দক্ষতা, তার কথা বলার, শোনার, বন্ধুত্ব স্থাপনের ক্ষমতা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের সার্বিক মূল্যায়ন। প্রায় ৩২ পাতার ডায়েরি সদৃশ্য ওই রিপোর্ট কার্ডই এখন রাজ্যের শিক্ষা মহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

বিদ্যালয় প্রধানেরা জানিয়েছেন, বহু কাল ধরে রাজ্যের স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের দু’ভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সামেটিভ এবং ফর্মেটিভ। প্রথমটিতে, পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠ্য বিষয়গুলির উপর কাগজ-কলমের পরীক্ষা। তাতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়। দ্বিতীয়টিতে পড়ুয়ার অন্যান্য দিকের মূল্যায়ন করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এত দিন পাঁচটি বিষয়ের উপর পড়ুয়াদের ফর্মেটিভ মূল্যায়ন করা হত। যেমন, পড়ুয়াদের যোগদান, প্রশ্ন করার দক্ষতা, সমানুভুতি এবং সহযোগিতার মানসিকতা, নান্দনিক বোধ ইত্যাদি। তবে এ সবের জন্য পড়ুয়াদের আলাদা করে কিছু পড়তে হয় না। হোলিস্টিক কার্ডে এই ফর্মেটিভ মূল্যায়নের মোট নম্বর যতই বাড়ুক তাতে পড়ুয়াদের কিছু অসুবিধা হবে না। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘হোলিস্টিক কার্ড পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মানুষ হিসাবে সার্বিক মূল্যায়ন হবে। এক জন শিক্ষার্থীর সমস্ত কিছু দেখা হবে বছর ভর। তবে নম্বরের বিরাট বোঝা বেড়ে গেল এমনটা আদৌ নয়।’’

Advertisement

হোলিস্টিক কার্ড নিয়ে অবগত করতে বুধবার নদিয়ার রানাঘাট মহকুমার ১৮৮টি হাইস্কুলের প্রধানদের নিয়ে ‘ওরিয়েন্টেশন’-এর আয়োজন করেছিল জেলা শিক্ষা দফতর। যা নদিয়ার অন্যান্য মহকুমায় ক্রমান্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার হোলিস্টিক কার্ড ওরিয়েন্টেশনে যোগ দিয়েছিলেন নদিয়ায় হলদিপাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘নতুন ব্যবস্থায় পড়ুয়াদের ফর্মেটিভ মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়েছে সাত এবং তার আচরণের মূল্যায়নের জন্য আরও ১০টি মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এতগুলি মাপকাঠির কারণে ফর্মেটিভের মোট মূল্যায়নের নম্বরও বেড়ে যাবে। তবে তাতে পড়ুয়াদের উপর কোনও চাপ পড়বে না।’’ প্রশিক্ষণ নেওয়া বিদ্যালয় প্রধানেরা জানিয়েছেন নম্বর বাড়ছে সামেটিভেও। এত দিন পঞ্চম শ্রেণির এক জন পড়ুয়াকে বছরে তিনটি সামেটিভে ১০,২০ ও ৫০ মিলিয়ে মোট ৮০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হত। এ বার থেকে তাদের ২০,৩০ ও ৫০ মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। অন্য দিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার মোট নম্বর ১১০ থেকে বেড়ে হল ১৫০।

যদিও শিক্ষকদের বড় অংশই হোলিস্টিক কার্ডের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তত্ত্বগত ভাবে এই ভাবনা খুব ভাল। কিন্তু আমাদের যেখানে বেশির ভাগ স্কুল শিক্ষকের, শিক্ষাকর্মীর অভাবে ধুঁকছে সেখানে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই ধরনের মূল্যায়ন ভাবনা কি আদৌ বাস্তব সম্মত?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement