শাহনাজ বেগম। —ফাইল চিত্র।
২০১৬ সালে দল ভাঙিয়ে তৃণমূলের জেলা পরিষদ গঠনের অন্যতম কারিগর ছিলেন শাহনাজ বেগম। সেই তিনিই কি এখন দল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন, সে প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে তৃণমূলের মধ্যেই। কারণ গত ৩০ অগস্ট রাজ্যের অন্য জেলার সঙ্গে মুর্শিদাবাদেও রাখিবন্ধন উৎসব পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য মহিলা তৃণমূলের তরফে। সে দিন শাহনাজ বেগম দলের রাজ্য মহিলা নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেননি। সেই সঙ্গে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বহরমপুর কলেজে তিনি চাকরিতে (স্টেট এডেড কলেজ টিচার) যোগ দিয়েছেন। আর তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তৃণমূলের অন্দরমহলে। তবে কী শাহনাজ দলে নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন, সেই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে দলের অভ্যন্তরে।
তবে শাহনাজ নিজে বলছেন, ‘‘কেন রাখি বন্ধন উৎসব পালন করতে পারিনি সেটা সংবাদ মাধ্যমকে বলার বিষয় নয়। যা বলার রাজ্য নেতৃত্বকে বলেছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি বহরমপুর কলেজে শিক্ষকতা করি। এত দিন ছুটি নিয়ে জেলা পরিষদের কাজে যুক্ত ছিলাম। আবার কলেজে যোগ দিয়েছি। এই কলেজের কাজে যোগ দেওয়ার সঙ্গে দলে নিষ্ক্রিয়তার কোনও সম্পর্ক নেই। ২০১৮ সালে সহকারী সভাধিপতির মেয়াদ শেষ হলে কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। পরে কর্মাধ্যক্ষ হওয়ার ফের ছুটি নিয়েছিলাম। এবারে কর্মাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কলেজে যোগ দিয়েছি।’’ বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাঁওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘শাহনাজ তো দলের কর্মসূচি করেন। হয়তো ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের আগে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের তেমন কোনও প্রভাব ছিল না। সে সময় তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য কংগ্রেসের শাহনাজ বেগম, মোশারফ হোসেন মণ্ডল (মধু) সহ আরও কয়েক জনের নেতৃত্বে তৃণমূল দল ভাঙিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। সে সময় তৃণমূল বৈদ্যনাথ দাসকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি করেছিল, শাহনাজ বেগমকে জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি করার পাশাপাশি মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী করেছিল। মোশারফ হোসেনকে জেলা পরিষদের কৃষি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচিত হন মোশারফ হোসেন মণ্ডল এবং কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন শাহনাজ বেগম, সহকারী সভাধিপতি নির্বাচিত হন বৈদ্যনাথ দাস। ২০২১ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোশারফ হোসেন মণ্ডল এবং বৈদ্যনাথ দাস তৃণমূল ছাড়েন। তবে শাহনাজ তৃণমূলই রয়েছেন। ২০২৩ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি কে হবেন তা নিয়ে শাহনাজ বেগমের পাশাপাশি রুবিয়া সুলতানা নাম ভেসে উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। শাহনাজ আট বছর ধরে মহিলা তৃণমূলের জেলার সভানেত্রী পদে রয়েছেন। সেই সঙ্গে তিন বারের জেলা পরিষদ সদস্য এবং জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রশাসনিক দক্ষতার দিক থেকে শাহনাজ সভাধিপতির দৌড়ে এগিয়েছিলেন বলে দলের অভ্যন্তরে চর্চাও চলছিল। কিন্তু জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচনে শেষ হাসি হাসেন রুবিয়া সুলতানা। তারপর থেকেই শাহনাজ ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে দলের একাংশ মনে করছে।