টিনার পঞ্চায়েতে লড়তে পারা নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলেই। প্রতীকী চিত্র।
বিধায়ক তাপস সাহা-র সঙ্গে তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য টিনা ভৌমিক সাহার দ্বন্দ্ব ক্রমশ যত তিক্ত হচ্ছে তত পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকায় রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ জটিল হয়ে উঠছে তৃণমূলের পক্ষে।
সিবিআই যদি তাপস সাহাকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে দেয় বা অন্য ভাবে বললে, যদি চাকরি-দুর্নীতিতে তাপসের যোগ প্রমাণিত না-হয় তা হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিনা ওই এলাকা থেকে ফের লড়াই করতে পারবেন কিনা, বা দাঁড়ালেও জিততে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্ন যথেষ্ট বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, তাপস এলাকার দাপুটে নেতা। তাঁর প্রভাবও যথেষ্ট। তিনি যে টিনাকে বিন্দুমাত্র সাহায্য করবেন না, সেটা সকলের কাছেই মোটামুটি স্পষ্ট। এতে আখেরে ক্ষতি তৃণমূলের, সেটাও দলের লোকেরা টের পাচ্ছেন।
রবিবার সকালে বিধায়ককে সরাসরি এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে বলেন, “দাঁড়াক তো আগে, তখন দেখতে পাবেন।” যদি টিনা পঞ্চায়েতের বদলে বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের টিকিট পান, তখন কী হবে এই প্রশ্নে তাপস বলেন, ‘‘সে তো এখনও অনেক সময় আছে। জল কোন দিকে গড়াবে, কী হবে, তখন দেখা যাবে।” আর টিনা ভৌমিক সাহা-র মন্তব্য,“কে টিকিট পাবে, কে পাবে না, সেটা ভেবে লাভ নেই। আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী, মাঠে নেমে কাজ করতে পছন্দ করি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ সব ঠিক করবেন। এ সব নিয়ে আমরা ভাবনা চিন্তা করি না।’’
গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে তৃণমূলের বঙ্গজননীর নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য টিনা ভৌমিক সাহার সঙ্গে বিরোধ বেড়েছে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা-র। একাধিক বার তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। শুক্রবার বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই অভিযানের পরেও টিনাকে নিশানা করেন তাপস।
২০১১ সালে তেহট্ট বিধানসভার টিকিট না পেয়ে তাপস সাহা নির্দলে দাঁড়িয়েছিল। সেবার জিততে না পারলেও তৃণমূলকে পেছনে ফেলেছিল। ফলে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ২০১৬ তে ফের দলে ফিরিয়ে পলাশিপাড়ার প্রার্থী করা হয়। সে বার নিজের সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন তাপস। সিপিএমকে হারিয়ে বিরাট “কামব্যাক” করেন তিনি। পরের বার ২০২১ বিধানসভায় তেহট্টের টিকিট পান এবং যেতেন। এলাকায় একেবারে নীচের তলা থেকে তাঁর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রবল।
অন্যদিকে, তেহট্ট প্রাক্তন বিধায়ক গৌরিশঙ্কর দত্তের হাতধরে রাজনীতিতে উত্থান টিনার। ত্রিপুরার ভোটে এবং মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির উপ-নির্বাচনের প্রচারেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে জিততে পারেনি তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে তাপসের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি যে বেকায়দায় পড়বেন, এ কথা তাঁর দলের লোকেরাই বুঝতে পারছেন।