চলছে বিকিকিনি। — নিজস্ব চিত্র
কোনও ‘সিঙ্গল’ নয়। স্টেপ আউট করে বল সোজা বাউন্ডারির বাইরে।
শনিবার মাস পয়লা। আর পরের দিন, পুজোর আগে শেষ রবিবার।
পুজোর আগে ক্রেতা-বিক্রেতা দু’জনের মুখেই চওড়া হাসি।
বাজার তেমন জমছে না বলে বেশ কিছু দিন থেকেই আক্ষেপ করছিলেন নদিয়া-মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীরা। মাসের শেষ বলে সে ভাবে বাজারে গিয়ে ‘ঝুঁকি’ নিতে চাইছিলেন না ক্রেতারাও।
তারপর শনিবার মোবাইলে ‘এসএমএস’ তো নয়, যেন ভূতের রাজার তিন বর ঢুকল। সেদিন বিকেলেই সপরিবার কেউ ছুটলেন বাজারে। কেউ আবার লম্বা লিস্টি করে বেরিয়ে পড়লেন রবিবার সকালে। থিকথিকে সেই ভিড় দেখে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল ব্যবসায়ীদেরও।
পুজোর বাজার অনেকটাই নির্ভর করে পাট ও ভিন্ দেশে কাজ করা ছেলেদের বাড়ি ফেরার উপরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘এ বছর পাটও ঘরে উঠে গিয়েছে। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা ছেলেরাও ঘরে ফিরেছে। অথচ পুজোর আগে এমন ফাঁকা বাজার আগে কখনও দেখিনি মশাই। এখন এই ক’টা দিনই ভরসা।’’
সেই কবে থেকে শহরের বড় রাস্তার দু’ধারে হরেক কিসিমের পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা প্রতি বছরের মত এ বারেও তৈরি ছিলেন। কিন্তু গাঁ-গঞ্জ থেকে দীর্ঘ পথ উজিয়ে আসা সেই ভিড় কোথায়! অবস্থা দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।
চাষিরা জানাচ্ছেন, পাট থেকে সব্জি কোনওটাতেই এ বার তেমন লাভ হয়নি। প্রথম দিকে পাটের দাম বেশ ভাল থাকলেও পরের দিকে সে বাজার অনেকটাই পড়ে যায়। বব্যবসায়ীরাও কবুল করছেন, সেই প্রভাবও নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর কিংবা বহরমপুরের মতো বাজারেও পড়েছে।
আরও দু’টি বিষয় ভাবাচ্ছে ব্যবসায়ীদের— অনলাইন কেনাকাটা ও শপিং মল! নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা কবুল করছেন, ‘‘অনলাইন ব্যবসা এ বার জোর ধাক্কা দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই সে দিকে ঝুঁকেছে। তাছাড়া শহরে গজিয়ে ওঠা নতুন নতুন শপিং মলের হাতছানিও রয়েছে। এই দুইয়ের প্রভাবও এ বারের বাজারে পড়েছে।”
মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্যের গলাতেও একই সুর। তিনি বলছেন, ‘‘পুজোর বাজার ধরতে বিভিন্ন সংস্থা অনলাইন কেনাকাটার উপরে ৩৫ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। থ্রিজি-ফোরজি-র যুগে সেই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারছে না।’’
বহরমপুরে ব্যবসা ‘মন্দা’র জন্য ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার দায়ী করছেন শহরের যানজটকে। তাঁদের দাবি, বহরমপুরকে যানজটের কবল থেকে মুক্ত করতে চেম্বার অফ কমার্স উদ্যোগী হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি।
তবে শনিবারের পর থেকে বাজার আবার উঠতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অন্য বারের মতো হল না ঠিকই। কিন্তু এই ক’টা দিন যদি দুগ্গা দুগ্গা বলে বাজারটা এমন থাকে তাহলেও বাঁচোয়া। বহরমপুরে পুজোর বাজার করতে এসেছিলেন সরকারি কর্মী সঞ্জয় রায়। তিনি বলছেন, ‘‘এ বারের পরিকল্পনা একটু অন্যরকম ছিল। তাই শনিবার পর্যন্ত মাইনের অপেক্ষায় ছিলাম। মাইনে পেতেই সপরিবার বেরিয়ে পড়েছি। বাজার সেরে রেস্তোরাঁয় খেয়েদেয়ে তারপর বাড়ি ফিরব।’’
জেলা সদরের মতো অবশ্য এতটা হা হুতাশ করছেন না মফস্সলের ব্যবসায়ীরা। করিমপুরের জুতোর দোকানের মালিক প্রীতম সাহা জানাচ্ছেন, ব্যবসার চেনা আদব-কায়দা এখন ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। এই এলাকার লোকজনও অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। কিন্তু দোকানেও ভিড় আছে। মাঝে ক’দিন বৃষ্টির জন্য লোকজন কম ছিল। কিন্তু শনিবারের পর থেকে বাজার ফের চাঙ্গা।
প্রীতমবাবুর দাবি, ‘‘একটা সময় বহু লোকজন বহরমপুর বা কৃষ্ণনগরে যেতেন পুজোর বাজার করতে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। মফস্সলের ব্যবসায়ীরাও এখন শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দোকানে জিনিসপত্র রাখছেন।’’
অতএব ক্রেতারা ছুটছেন। ছুটছে বাজারও। পুজোর কাউন্টডাউনও তো শেষ হতে চলল—চার, তিন, দুই, এক...