রানাঘাট বাস স্ট্যান্ড। শনিবার। ছবি সুদেব দাস।
একাধিকবার আন্দোলন, অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখার পরেও সমস্যা মেটেনি। জাতীয় ও রাজ্য সড়কে নিয়ম না-মেনে টোটো ও অটো দাপট থাবা বসিয়েছে বেসরকারি বাস পরিষেবায়। ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাস মালিকেরা। বাধ্য হয়ে রানাঘাট থেকে চারটি রুটে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। শেষ এক বছরে শুধুমাত্র রানাঘাট মহাকুমাতেই ৩০টির বেশি বাস বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকেরা। একের পর এক রুটে বাস পরিষেবা বন্ধ হওয়াতে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীদের একাংশ।
বাস মালিকদের একাংশ জানিয়েছেন, টোটো ও অটোর দৌরাত্ম্য ঠেকাতে প্রশাসনিক স্তরে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তাতে কোনও সমাধান সূত্র বার হয়নি। তাঁদের দাবি, বাস রুটে টোটো ও অটো অবৈধ ভাবে চলাচল করছে। ফলে বাসে যাত্রী সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। সারাদিন বাস চালিয়ে জ্বালানির খরচ উঠছে না। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর জানুয়ারি মাস থেকে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের অবৈধ যানবাহন চলাচলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রচার করেছিল। যদিও সেই প্রচারই সার। লাভ কিছুই হয়নি।
বাস বন্ধ যে রুটে
রানাঘাট-গাইঘাটাবাস চলত ১৮টি
রানাঘাট-আঁইশমালিবাস চলত ১০টি
রানাঘাট-বাগআচঁড়াবাস চলত ১০টি
রানাঘাট-বলাগড়বাস চলত ৮টি
বাস মালিকদের একাংশ জানিয়েছেন, রানাঘাটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে থাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে আগে প্রতিদিন মোট দশটি রুটে ৮৫টি বেসরকারি বাস চলত। তার মধ্যে রয়েছে দিঘা, শিলিগুড়ি ও কোচবিহারের দূরপাল্লার বাস। বাকি সাতটি রুটে কোনও সরকারি বাস চলাচল করে না। যাত্রী না-হওয়ায় রানাঘাট থেকে গাইঘাটা, আঁইশমালি, বাগআচঁড়া ও বলাগড় ঘাট রুটের বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাস মালিকেরা জানান, যে রুটে বাস চলাচল করবে, সেই রুটে কোনও ভাবেই অটোর চলার অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। নিয়মের তোয়াক্কা না-করেই চলছে অটো ও টোটো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক বাস যাত্রী এখন ওই তিন রুটের বাস ধরবেন বসে বাসস্ট্যান্ডে এসে সমস্যায় পড়ছেন। এই তিন রুটে বাস যে চলাচল করে না, তা তাঁরা বাসস্ট্যান্ডে আসার পর জানতে পারছেন। বলাগড়ের বাসিন্দা গোপাল সিংহ বলেন, ‘‘কর্মসূত্রে রানাঘাট শহরে আসতে হয়। ভাগীরথী নদী পার করে আগে বাসে চেপেই রানাঘাটে আসতাম। এখন ৩-৪ বার টোটো বদল করে আসতে হচ্ছে। তাতে ভাড়াও লাগছে বেশি।’’
রানাঘাট মহকুমা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মদন দাস বলেন, ‘‘যাত্রী পরিষেবা বা যাত্রীদের সমস্যায় ফেলা কখনই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সড়কে যে ভাবে টোটো ও অটোর দৌরাত্ম্য বেড়েছে, তাতে বাস চালানো দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। প্রশাসনকে একাধিক অবৈধ যানবাহন বন্ধ করতে আবেদন করেছি। তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক দিলীপকুমার মাইতি বলেন, ‘‘অবৈধ যানবাহন চালক ও যাত্রীদের আমরা সচেতনতার জন্য প্রচার করছি। আগামী দিনে করা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’