—প্রতীকী চিত্র।
বাস ভাড়া শেষ বার বেড়েছে ২০২১ সালে। মাত্র এক টাকা। পরে জ্বালানির দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তবে বেসরকারি বাস ভাড়া বাড়াতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে ফের পয়লা জুলাই থেকে রাজ্য জুড়ে দাম বাড়ল পেট্রল-ডিজেলের। তাতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাস মালিক ও কর্মীদের মধ্যে।
বেসরকারি বাস মালিকেরা জানাচ্ছেন, গত মার্চ মাসে কৃষ্ণনগরে পেট্রলের দাম ছিল লিটার প্রতি ১০৭.০৬ টাকা এবং ডিজেলের দাম ছিল ৯৩.৭৩ টাকা। পরবর্তী কালে জ্বালানির দাম কমে। কৃষ্ণনগর বাস মালিক সমিতির তরফে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে জ্বালানির দাম লিটার পিছু কমেছিল। রাজ্য সরকার ওই সময় সারচার্জ লিটার প্রতি এক টাকা ছাড় দিয়েছিল।” তিনি জানান, রাজ্য সরকার সে সময় ঘোষণা করেছিল, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ছাড় বহাল থাকবে। সেই সিদ্ধান্ত মতো পয়লা জুলাই থেকে ফের দাম বাড়ল। ৩০ জুন পর্যন্ত কৃষ্ণনগরে পেট্রলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১০৪.৯৮ টাকা। জুলাই থেকে যা বৃদ্ধি পেয়ে হল ১০৫.৯৯ টাকা। অন্য দিকে, ডিজেলের দাম ছিল ৯১.৭২ টাকা। বৃদ্ধি পেয়ে হল ৯২.৭৩ টাকা।
ভোট মিটতে নতুন করে পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ বেসরকারি বাস মালিকেরা। তাঁরা জানান, টায়ার, যন্ত্রাংশের দাম অস্বাভাবিক হারে বড়েছে। বেড়েছে বিমা, পথকর, কর্মীদের বেতনও। তার উপরে আবার জ্বালানির দাম বাড়ল। সব সামাল দিতে গিয়ে ফতুর হয়ে যাচ্ছেন বাস মালিকেরা। উল্টো দিকে টোটো, অটো-সহ বিভিন্ন ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হু-হু করে কমছে যাত্রীর সংখ্যা।
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি এবং দীর্ঘ দিনের পরিবহণ ব্যবসায়ী অসীম দত্ত পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ‘‘২০১৮ সালের দুর্গাপুজোর পর থেকে জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। সেই সময় ডিজেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৬৩ টাকার সামান্য বেশি। আর মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে ডিজেলের দাম ছিল ৯৩ টাকা প্রায়। ছয় বছরে ৩০ টাকা বৃদ্ধি।’’ এই সময়কালে রাজ্যে বেসরকারি বাসের ভাড়া একবারই মাত্র বেড়েছে ২০২১ সালে। ন্যূনতম ভাড়া ৫ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৬ টাকা। এখনও সেই ভাড়াই বহাল আছে।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্য সুদীপ নাগ বলেন, ‘‘বেসরকারি বাস মালিকদের এক অসম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বাসের রুট জুড়ে চলছে বেআইনি টোটো-সহ অন্যান্য গাড়ি। ক্রমশ কমছে যাত্রী। অথচ যে ভাবে বাড়ছে খরচ তা বলার নয়।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘এক জোড়া টায়ার ১৮ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার, ২২ হাজারের টায়ার হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। একটি টায়ারের আয়ু বড়জোর তিন থেকে চার মাস। বাস কর্মীদের দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। সেই সঙ্গে বাসের যন্ত্রাংশের দামের বৃদ্ধি তো আছেই। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’’
নিরুপায় বেসরকারি বাস মালিকদের অধিকাংশই এখন কেরোসিনে বাস চালাচ্ছেন। তাঁরা জানান, ৭০ টাকা লিটার কেরোসিন বাসের আয়ু কমিয়ে দেবে জেনেও তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন ডিজেল বর্জন করতে।