প্রণব মণ্ডল। ফাইল চিত্র
পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বাংলাদেশের জেলে বন্দি। দু’বেলার অন্ন সংস্থানে হিমশিম অবস্থা জলঙ্গির শিরচরের মণ্ডল পরিবারের। পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় মহাজনও পা রাখেননি সে বাড়িতে। কিন্তু একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীদের হাত থেকে নিস্তার মেলেনি তাঁদের। বিজিবি-র হাতে বন্দি শিরচরের প্রণব মণ্ডলের বাড়িতে হানা দিয়ে রীতিমতো হুমকি দিয়ে এসেছেন তাঁরা, এমনই অভিযোগ প্রণবের স্ত্রী রেখার। তিনি বলছেন, ‘‘হাত জোড় করে বলেছি, কী ভাবে দিন চলছ আমাদের। তাতেও কর্ণপাত না করে হুমকি দিতে থাকায় পড়শিদের কাছে হাত পেতে টাকা গুনে দিয়েছি।’’
শুধু তাই নয়, দিন কয়েক পরেই ফের ওই ব্যঙ্ক-কর্মীরা হানা দেবেন বলে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন রেখা। এ ব্যাপারে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপেই তাঁরা প্রণব মণ্ডলের বাড়িতে পাওনা ‘ইএমআই’ চাইতে গিয়েছিলেন।
দিন কয়েক আগে, পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করার দায়ে বিজিবি তাঁকে আটক করে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, দু’দেশের সীমান্তরক্ষীরা পতাকা-বৈঠক করে ওই সীমানা-ভাঙা ধীবরদের মুক্তি দেন। তবে, এ ক্ষেত্রে ঘটনা মোড় নিয়েছিল অন্য দিকে। বিজিবি এবং বিএসএফের বাগবিতন্ডায় বিজিবি’র গুলিতে প্রাণ হারান এক বিএসএফ জওয়ান। আটক করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রণবকে।
ওই ব্যাঙ্কের কাছে স্থানীয় মহিলারা একটি গ্রুপ লোনের আবেদন করেছিলেন। পাড়ার অন্যদের সঙ্গে রেখাও ছিলেন সেই ঋণের অংশীদার। কিন্তু প্রণব আটক থাকায় সময় মতো টাকা ফেরত দিতে না পারায় ঋণখেলাপি হয়েছিলেন রেখা। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ইলিশের মরসুমে বাড়তি আয় হবে। ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করে দেওয়া যাবে সেই টাকাতেই।’’ ওই ঘটনার পরে, সীমান্তের চেহারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও প্রণব মণ্ডল মুক্তি পাননি। আর তার জেরেই শিরচরে তাঁর পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থার হাল ফেরেনি।
প্রণবের ভাইপো অমৃত মণ্ডলের দাবি, বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘ এখনোও পর্যন্ত আমরা জানি না কাকা কোথায় কেমন আছেন, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে খোঁজখবর নেওয়াও খুব কঠিন। এক দিকে কাকাকে না পেয়ে আমরা হতাশ, অন্য দিকে পরিবারে দেখা দিয়েছে আর্থিক অনটন। এই অবস্থায় প্রশাসন উদ্যোগী না হলে পরিবারটিই ভেসে যাবে!’’