—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
‘‘আমার রক্তে তোমার সোহাগ, হৃদয়ে আমার ছ্যাঁদা/ গোলাপগুলো নেতিয়ে গিয়েছে, তাই এনেছি গ্যাঁদা!’’ অধুনা এক বাংলা সিনেমার এই সংলাপ মুখে মুখে ফেরে। তবে সরস্বতী পুজো আর ‘ভ্যালেনটাইনস্ ডে’-র ‘যৌথ হানা’য় গোলাপের মতো গাঁদার দামও চড়েছে চড়চড়িয়ে। এমতাবস্থায় গোলাপ বা গাঁদা নয়, অন্য ফুলের দিকে ঝুঁকছেন সবাই। সরস্বতী পুজোর আগের দিন বাজার ঘুরে মিলল ফুলের দাম নিয়ে নানা তথ্য।
এ বার ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস্ ডে’ এবং সরস্বতী পুজো একই দিনে। প্রেম দিবসে প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য গোলাপ এবং সরস্বতীর আরাধনার জন্য গাঁদা— দুইয়েরই চাহিদা এমন যে, নদিয়ার কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কল্যাণী থেকে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া, ফরাক্কা এবং বহরমপুরের ফুলের বাজারে আগুন লেগেছে।
সদ্য পার করে আসা নিম্নচাপের কারণে এ বার মরসুমি ফুলের চাষ খুব একটা ভাল হয়নি। ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রচুর ফুলের গাছ। একেবারেই আশাপ্রদ ফলন হয়নি গোলাপের। তাই এ বার গাঁদা ফুল হোক বা গোলাপ— সবই নাগাল ছাড়িয়েছে মধ্যবিত্ত প্রেমিক থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের। একটি গোলাপ কিনতে গিয়েও দু’বার ভাবছেন যুবক-যুবতীরা। অন্য দিকে, ফুলের অভাবের জন্য জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই দুই ছবিই দেখা গেল নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের ফুলের বাজারে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, চাহিদা মেটাতে তাঁরা ফুল আমদানি করছেন ভিন্রাজ্য থেকেও। এমনকি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও যাচ্ছেন অনেকে। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর শহরের ফুলবাজারে যা পরিস্থিতি, তাতে প্রেম দিবসে হয়তো টাকা দিয়েও মনের মতো ফুল পাবেন না প্রেমিকরা।
‘ভ্যালেনটাইনস্ ডে’-তে ভালবাসার মানুষকে গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো বহু পুরনো রেওয়াজ। তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি এমনিতেই গোলাপ এবং মরসুমি কিছু ফুলের বাজার তুঙ্গে থাকে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং অন্য বছরের চেয়ে ফুলের চাহিদা অনেকটা বেশি এ বার। কারণ, সঙ্গে রয়েছে সরস্বতী পুজো।
সাধারণ সময়ে যখন একটি গোলাপ ফুল ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করেন দোকানিরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই ফুলেরই দাম দাঁড়ায় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ বার তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকারও বেশি দামে। শুধু গোলাপ নয়, সরস্বতী পুজোর কারণে আকাশ ছুঁয়েছে গাঁদা ফুলের দামও।
নদিয়ার রানাঘাট, ধানতলা, শিমুলতলা, চাপড়া, বেথুয়াডহরির বিস্তীর্ণ এলাকায় গোলাপ চাষ হয়। তা ছাড়া হাওড়া, কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গের পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত ধরে নদিয়ার গোলাপ পৌঁছে যায় সারা রাজ্যে। এমনকি, রফতানি হয় বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতেও। ভালবাসার সপ্তাহে ‘বিশেষ আকর্ষণ’ লম্বা ডাঁটিওয়ালা বিশেষ প্রজাতির গোলাপ (চায়না গোলাপ)। সাধারণত সেটি আসে বেঙ্গালুরু থেকে। এ বার সেই গোলাপেরও একটির দাম ১০০ টাকার উপর। বস্তুত, চলতি বছরে গোলাপের এই মূল্যবৃদ্ধিই কাঁটা ছড়িয়েছে প্রেমের পথে। কৃষ্ণনগর পোস্টঅফিস মোড়ে গোলাপ কিনতে আসা সুমি রায়ের কথায়,‘‘শুধু তো গোলাপ দেওয়া নয়,রেস্তরাঁয় খাওয়া-দাওয়া থেকে ঘোরাঘুরি, অন্যান্য সব খরচও থাকে। কিন্তু দু’টি গোলাপ কিনতে গিয়েই তো সব বাজেট তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে!’’ ফুলের আচমকা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কৃষ্ণনগরে ফুল ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ মজুমদার বললেন, ‘‘কয়েক দিন আগের নিম্নচাপে সমস্ত ফুলই সাধারণ ধসা রোগে আক্রান্ত। গাঁদা-সহ অন্যান্য ফুল কুঁড়িতেই পচে যাচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমনিতে বেঙ্গালুরুর গোলাপের দাম বেশিই হয়। কিন্তু এ বার দেশি গোলাপের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম অনেকটাই বেশি হয়েছে। তাই ক্রেতাও অনেক কম। ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে আমাদের।’’ বহরমপুরের গির্জার মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী আশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদে ফুলের উৎপাদন খুব একটা হয় না। উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া এবং বেঙ্গালুরুর ফুলের উপরে নির্ভর করতে হয় মুর্শিদাবাদের ফুলপ্রেমীদের।