Murshidabad Medical

Eye bank: মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে তৈরি হবে ‘আই ব্যাঙ্ক’

বর্তমানে এই হাসপাতালে ‘আই ব্যাঙ্ক’ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলা থেকে সংগৃহীত চোখ কলকাতায় পৌঁছতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগছে।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ০৫:১৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। অবশেষে ‘আই ব্যাঙ্ক’ চালু হতে চলেছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সূত্রের খবর, শুক্রবারই সেই সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যেই ওই ‘আই ব্যাঙ্ক’ চালু করতে নির্দেশ এসেছে। রাজ্য ও কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে হবে সেটি।

Advertisement

বর্তমানে এই হাসপাতালে ‘আই ব্যাঙ্ক’ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলা থেকে সংগৃহীত চোখ কলকাতায় পৌঁছতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগছে। এর ফলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাজ্যে দৃষ্টিহীনের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার শিশুর কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায় নানা কারণে। মুর্শিদাবাদ জেলাতেও সেই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। বহরমপুরের হাসপাতালে এই ‘আই ব্যাঙ্ক’ চালু হলে উপকৃত হবেন মুর্শিদাবাদ এবং এর আশপাশের জেলাগুলি। সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘আইএমএ’ এবং চক্ষুদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও। মরণোত্তর চক্ষুদানে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক পিছিয়ে এ রাজ্য। রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যেও এ ব্যাপারে অনেকটাই পিছিয়ে মুর্শিদাবাদ। অনেকের মতে, এর প্রধান কারণ এই জেলায় চক্ষু সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকা। মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত বহরমপুরের ‘ক্ষুদিরাম পাঠাগার’। গত দু’দশকে এই সংস্থার উদ্যোগে সাতশো জনের মরণোত্তর চোখ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সংখ্যাটা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। দাতাদের মধ্যে অন্তত ৬৮০ জনই বহরমপুরের বাসিন্দা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চক্ষুদান সংক্রান্ত বিভাগটির দেখভাল করা চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মরণোত্তর চক্ষুদানে মুর্শিদাবাদ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বহরমপুর শহর ছাড়া আরও কোথাও বাসিন্দাদের মরণোত্তর চক্ষুদানে আগ্রহ দেখা যায় না। তাছাড়া, চোখ দানের পর তা সংরক্ষণ করতে নিয়ে যেতে হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’’ তিনি আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর চার ঘণ্টার মধ্যে চোখ সংগ্রহের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করা দরকার। তারপর কলকাতার হাসপাতালে তা পৌঁছে দিতে অনেক সময় লেগে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ফরাক্কা থেকে রেজিনগর, ডোমকল, জেলার এতটাই ব্যাপ্তি যে সময়ের মধ্যে পৌঁছে কর্নিয়া সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে আমাদের পক্ষে।”

চিন্ময়বাবু আক্ষেপের সুরে বলেন, “জেলার ক্লাব ও সংস্থাগুলির রক্তদানে আগ্রহ থাকলেও মৃত্যুর পর চোখ দানের বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন ভাবে না। ফলে চোখ দান নিয়ে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। অথচ, চোখ দানের মাধ্যমেই দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। সকলেরই এটা ভেবে দেখা জরুরি। গ্রামীণ এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে হবে। তবেই মরণোত্তর চোখ দানের হার বাড়া সম্ভব।’’ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১০০ জোড়া কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয় এই জেলা থেকে। বহরমপুরে চক্ষু সংরক্ষণ কেন্দ্র হলে এই কাজ সহজে করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।জেলায় আইএমএ-র সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য্য বলছেন, “বর্তমানে গোটা পূর্ব ভারতে আই ব্যাঙ্ক রয়েছে শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘আই ব্যাঙ্ক’ হলে শুধু সংরক্ষণই নয়, চোখ প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব হবে। তাতে উপকৃত হবেন আশপাশের জেলার বহু মানুষ।’’ জেলার এক চক্ষু চিকিৎসক অবশ্য বলছেন, “জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘আই ব্যাঙ্ক’ গড়ে তোলা হয় না কেন, সেই প্রশ্ন ওঠাটা সঙ্গত। তবে এটাও ঠিক, কর্নিয়া সংরক্ষণ করলেই হবে না। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য দক্ষ শল্যচিকিৎসকের অভাব জেলায় রয়েছে।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement