প্রতীকী ছবি
অবৈধ ভাবে গর্ভপাত করাতে গিয়ে আট মাসের গর্ভবতী এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় তাঁরই গ্রামের অন্য এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম মিলি বিবি। অভিযোগ, মিলি বিবি ও তাঁর দেওর অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলাকে গর্ভপাত করানোর জন্য নার্সিংহোমে নিয়ে এসেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ধুবুলিয়ার ওই নার্সিংহোমে গর্ভপাত করাতে গিয়ে বছর আটত্রিশের ওই মহিলার মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত মহিলার বাড়ি চাপড়ার পুকুরিয়া গ্রামে। তাঁর ২০, ১৯ ও ১৩ বছরের তিন ছেলে এবং ১৪ বছরের একটি মেয়ে আছে। বছর আটেক আগে মহিলার স্বামী মারা যান। তিনি বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে একাই থাকতেন। তাঁর এলাকারই বাসিন্দা সবুর আলির তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বছর পঁয়তাল্লিশের সবুর বিবাহিত, তাঁরও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী এবং বছর তেরোর এক ছেলে। মিলি বিবি, ও তাঁর দেওর সবুর আলি, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সিংহোম মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার ভাসুরের ছেলে। এর পরই পুলিশ মিলি বিবিকে গ্রেফতার করে। বাকিরা আপাতত পলাতক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সবুর আলির সঙ্গে সম্পর্কের জেরে ওই মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। মিলি বিবিকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, পেশায় ইটভাটার শ্রমিক সবুর আলি মৃত মহিলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তাই মহিলা প্রথম অবস্থায় গর্ভপাত করাননি। কিন্তু এই বিয়ে মানতে চাননি সবুর আলির পরিবার। এই নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকে। আট মাস পেরিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় মিলি বিবি জানিয়েছেন, পরিবারের চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হন সবুর আলি। তখন ঠিক হয় গর্ভপাত করানো হবে। অনেক বুঝিয়ে মহিলাকে গর্ভপাতে রাজি করানো হয়। যোগাযোগ করা হয় ধুবুলিয়ার এক নার্সিংহোমের সঙ্গে।
সোমবার তাঁকে সেখানে ভর্তি করে আসেন সবুর ও মিলি। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গর্ভপাত করানোর জন্য একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার পরই গর্ভস্থ ভ্রূণ-সহ মারা যান বছর আটত্রিশের ওই মহিলা। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ওই নার্সিংহোমের মালিক বামুনপুকুর এলাকায় থাকেন। বছরখানেক আগে তিনি ধুবুলিয়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে নার্সিংহোম খুলে বসেন। ঘটনার পর নার্সিংহোমে তালা লাগিয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশের মতে, ওই নার্সিংহোম চিকিৎসার তেমন কোনও পরিকাঠামোই ছিল না। সেখানে মূলত গোপনে গর্ভপাতই করা হত। তদন্তে জানা গিয়েছে, এক চিকিৎসক মাঝে মাঝে এসে গর্ভপাত করে যেতেন। ওই চিকিৎসকের বাড়ি বহরমপুর অথবা মালদহতে। পুলিশ তাঁর খোঁজ করছে।