ফাইল চিত্র।
অভিযানও চলছে। বন্ধ হচ্ছে না বিদ্যুৎ চুরিও। বিষয়টি কবুল করছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, অভিযানের অভিজ্ঞতা সবসময় কিন্তু সুখের হয় না। বিদ্যুৎ চুরি রুখতে গ্রামেরই যাঁদের বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে সহযোগিতা করার দরকার, অনেক সময় তাঁরাই চুরিকে প্রশ্রয় দেন। কারণ, চুরির ধন পাইয়ে দেওয়াটাও অনেক সময় পাশে থাকার বার্তা দেয়। যে বার্তাতে সুবিধা হয় ভোটের হিসেব কষার।
সুতি ১ ব্লকের এক বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতেও হুকিংয়ের বিদ্যুতে জ্বলছে এলইডি ল্যাম্প, চলছে টিভি ও পাখা। জমিয়ে চলছে বিশ্বকাপের খেলাও। জনপ্রতিনিধির বাড়িতে কি হুকিং শোভা পায়? নির্বিকার সেই বিদায়ী প্রধান বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যা বলার আমার স্বামী বলতে পারবেন।’’
অরঙ্গাবাদের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানাচ্ছেন, হুকিংয়ের চুরি তো আছেই। সাগরদিঘি বা কান্দির বেশ কিছু এলাকায় হাইটেনশন তার থেকেও বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। নিজেরাই ট্রান্সফর্মার জোগাড় করে তার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাঁশের খুঁটি বসিয়ে। খরা ও শীতের সময় ওই চুরির বিদ্যুতেই চলে সেচের কাজ। গ্রামের সকলেই সে কথা জানে। কিন্তু তারা মুখ খোলে না। কেউ ভয়ে, কেউ ঝামেলা এড়াতে।”
ওই কর্তার কথায়, ‘‘অন্য রাজ্যে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে কড়া আইন আনা হয়েছে। পাঁচ থেকে দশ বছর কারাদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। অথচ এ রাজ্যে বিদ্যুৎ চুরি ধরতে গেলে উল্টে বিদ্যুৎ দফতরের লোকজনকেই বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল ৭.৭০ লক্ষ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ। ২০১২ সালে বিদ্যুৎ চুরি হয়েছিল তখনকার বাজার দর অনুযায়ী প্রায় ৪৩০ কোটি টাকার। অর্থাৎ সরবরাহ বিদ্যুতের প্রায় ৬৫.৬৩ শতাংশ বিদ্যুৎ চুরি হয়েছিল।
মুর্শিদাবাদের বিদ্যুৎ দফতরের আঞ্চলিক অধিকর্তা অরূপ ঘোষ জানান, বিদ্যুৎ চুরির চেনা ছবিটা ৬ বছর পরেও বিশেষ বদলায়নি এ জেলায়। চুরির গড় পরিমাণ সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশ শতাংশে। বিদ্যুতের দাম বেশ কিছুটা বেড়া যাওয়ায় আর্থিক লোকসানের অঙ্কটাও বেশ কিছুটা কমানো গিয়েছে।
কান্দি, বহরমপুর ও রঘুনাথগঞ্জে বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত তিন কর্তার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ চুরির অভিযান চলছে ধারাবাহিক ভাবে। বিশেষ কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করে বিদ্যুতের তার রবার দিয়ে ঢাকার কাজ শুরু হয়েছে এ জেলাতেও। বসেছে স্মার্ট মিটার। কিন্তু তার পরেও চুরি থামছে না।
বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলছেন, “আগে গ্রামে গেলেই অভিযোগ মিলত, ‘টাকা জমা দিয়ে বসে আছি, কিন্তু বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’ এখন সে অবস্থা নেই। আবেদন করলেই বিদ্যুৎ মিলছে। তার পরেও চুরির প্রবণতা কমছে না।’’