গমের বীজ মেলে ফসল ওঠার সময়

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত ত্রিবেদী। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সাহা। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত ত্রিবেদী। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সাহা। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

পুকুর নয়, রাস্তায় জমেছে এমন জল। — নিজস্ব চিত্র

কান্দি-বহরমপুর ও কান্দি পানুটিয়া রাজ্য সড়কের ধারে বহু মোড়ে এখনও প্রতীক্ষালয় নেই। শৌচাগারও নেই। এতে সকলের অসুবিধা হয়। পঞ্চায়েত সমিতি ওই বিষয়ে কী ভাবছে?

Advertisement

রাজ্যধর রাজবংশী, ঘোষবাটি

প্রতীক্ষালয় যে একেবারেই নেই তা নয়। তবে আরও শৌচাগার দরকার। কিন্তু জমি না মেলায় তা তৈরি করা যাচ্ছে না। প্রতীক্ষালয়গুলির অধিকাংশই কিছু ব্যবসায়ী দখল করেছেন। তবে যে প্রতীক্ষালয়ের প্রয়োজন সেখানে অবশ্যই প্রতীক্ষালয় হবে। তবে জমির ব্যবস্থা এলাকার বাসিন্দাদেরই করতে হবে। সেখানে শৌচাগারও করা যেতে পারে।

Advertisement

এ বার আমাদের এলাকায় বৃষ্টি তেমন হয়নি। চাষিদের বিদ্যুৎচালিত পাম্প চালিয়ে জল দিতে হয়েছে। কিন্তু লো-ভোল্টেজের জন্য সেটিও ভাল ভাবে করা যায়নি। এতে ক্ষতির মুখে পরতে হচ্ছে চাষিদের। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

মিলন ঘোষ, বহড়া

এটা ঠিক এ বার চাষিদের আমন চাষ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একই ভাবে এই ব্লকে বর্ষার জলে বন্যায় চাষে ক্ষতি হচ্ছে। কোথাও আবার জলের অভাবে চাষের ক্ষতি হচ্ছে। কান্দি বন্যাপ্রবণ এলাকা ওই এলাকায় কৃষি বাঁচাতে চাষের কাছে ব্যবহৃত সেচের জন্য বিদ্যুৎচালিত পাম্পের দ্বারা যে জল ব্যবহার করা হয় সেখানে বিদ্যুতের মাশুল মুকুব করার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরে দাবি জানানো হয়েছে।

এলাকার অনেক ঢালাই করা রাস্তায় ভারী যানবাহন চলায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। এর ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। যান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কী?

খোদাবক্স, পার্বতীপুর

রাজ্য সড়কের তুলনায় গ্রামের ভিতরের ঢালায় রাস্তায় ভারী যানবাহন বহন করার ক্ষমতা কনেক কম। ওই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। এখানে পঞ্চায়েত সমিতির কিছু করার নেই। তবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ভারী যানবাহন যাতায়তও করবে। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একত্রিত হয়ে ওই রাস্তা দিয়ে বড় ট্রাকের পরিবর্তে ছোট ট্রাক্টর ব্যবহার করে ভারী জিনিস বহন করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ব্লকের অধিকাংশ প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি রাজ্য সড়কের ধারে। রাস্তা দিয়ে অবিরাম যানবাহন চলে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। অথচ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সামনে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তায় স্পিড-ব্রেকারের ব্যবস্থা নেই। পঞ্চায়েত সমিতি কোনও ব্যবস্থা কী ব্যবস্থা নেবে?

কাজল চট্টোরাজ, ঘোষবাটি

বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতির এক্তিয়ারভূক্ত নয়। বহুবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও স্কুলের সামনে রাস্তায় বাম্পার দেওয়ার জন্য পূর্ত দফতরের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু নিয়মের জটিলতার কারণে তা হয়নি। পরে স্কুলের সামনে গাড়ি আস্তে চালানোর বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়েও কোনও লাভ হয়নি।

কানাময়ূরাক্ষী নদীর ওপারে অনেকে বসবাস করেন। চাষাবাদ সবই করেন। কিন্তু বাজার, হাট, স্কুল, হাসপাতাল সব কিছুই রাস্তার এক অন্য পারে। তাই নদী পেরিয়ে যাতাযাত করতে হয়। নদীর উপর এখনও কোনও সেতু হয়নি। লক্ষ্মীনারায়ণপুর, দক্ষিণ লক্ষ্মীনারায়ণপুরে বাসিন্দাদের প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে। ওই নদীর উপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি কোনও উদ্যোগ নিয়েছে?

আব্দুল হালিম, দক্ষিণ লক্ষ্মীনারায়ণপুর

ওই নদীতে যে একটি সেতুর প্রয়োজন আছে। কিন্তু ওই সেতু নির্মাণ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ পঞ্চায়েত সমিতির নেই। আমি এলাকার সাংসদকে ওই এলাকায় সেতু নির্মাণ করার জন্য দাবি জানিয়েছি।

চাষিদের চাষ হয়ে যাওয়ার পরে সরকারি ভাবে বীজ দেওয়া হয়। যেমন আমন ধানের বীজ পাওয়া যায় ধানের রোওয়া হয়ে যাওয়ার পরে। আবার গম বা সর্ষের বীজ পাওয়া যায় ফলনের সময়। ফলে ওই বীজ চাষিদের কাছে লাগে না। ওই বীজগুলি যাতে যোগ্য সময়ে চাষিরা পান সেদিকে নজর দিলে ভাল হয়।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল, লাহারপাড়া

অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এটা সম্পূর্ণ কৃষি দফতরের বিষয়। প্রশাসনের কিছুটা হলেও ক্রুটি আছে। তবে সেটা সব সময় নয়। রাজ্য থেকে যে সময় বীজ আসে সেই সময়ে চাষিদের হাতে ওই বীজ তুলে দেওয়া হয়। তবে চাষিরা ওই বীজ যাতে যোগ্য সময়ে পান সেই চেষ্টা করব।

জন্যস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল সরবরাহের জল এখন সব এলাকায় পৌঁছয় না। যে সব এলাকায় ওই জল পৌঁছয় সেই জল খাওয়া তো দূর ঘরের কাজেও লাগে না। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

রঞ্জিত দাস, বহড়া

বহুবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এলাকায় যে পাইপ লাইন আছে সেটি অনেক পুরনো। পাইপ লাইনকে বাদ দিয়ে নতুন করে পাইপলাইন ও নতুন পাম্পের ব্যবস্থা না করলে ওই সমস্যার সমাধান হবে না।

বহু নলকূপ বিকল। পঞ্চায়েতেকে ওই নলকূপগুলি সংস্কারের দাবি জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বাসিন্দারা নিজেরাই চাঁদা তুলে ওই নলকূপ মেরামত করেন। জলকষ্ট থেকে বাসিন্দারা মুক্তি পাবেন কী?

সুব্রত মণ্ডল, মোল্লা

অর্থ বরাদ্দ না হওয়ার কারণেই নলকূপগুলি মেরামত হয়নি। এ বার অর্থবরাদ্দ হয়ছে বলে শুনেছি। আশাকরি এ বার নলকূপগুলি মেরামতির কাজ শুরু হবে।

যোগ্য ব্যক্তিদের পরিবর্তে অনেকই বার্ধ্যকভাতা ও বিধবাভাতা পাচ্ছেন। বহু যোগ্য মানুষ ওই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাঁরা যাতে তা পান তার কোনও ব্যবস্থা কী পঞ্চায়েত নিচ্ছে?

স্বপন মণ্ডল, লাহারপাড়া

বিধবা না হয়েও অনেকে বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। এ ধরনের কিছু বহু নাম আছে সেটা কেন্দ্র সরকারের নজরে এসেছে। ওই নামগুলি বাদ দেওয়ার জন্য রাজ্য জুড়ে শুধু নয় দেশ জুড়ে কাজ চলছে। দেড় বছর ধরে নতুন করে কোনও নাম এখনও তোলা হয়নি। নতুন তালিকা পেলে সেটা পরিষ্কার হবে।

গ্রামের কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ দফতর বিপদজ্জনক ভাবে তার টাঙিয়েছে। যার থেকে যে কোনও সময় বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তারগুলি খুলে নতুন ভাবে তার টাঙানোর জন্য পঞ্চায়েত সমিতি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

সোমনাথ দাস, সিঙেড্ডা

এমন ঘটনা অনেক গ্রামে দেখা যায়। তাই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ওই তারগুলি পরিবর্তন করে নতুন তার লাগানোর আশ্বাস দিয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

কান্দি শষ্যগোলা হিসাবে পরিচিত। এলাকার বহুচাষি আলু চাষ করেন। কিন্তু চাষিদের আলু চাষের জন্য বীজ এলাকায় পাওয়া যায় না। ভিন্‌রাজ্য বা জেলা থেকে বীজ এনে আলু চাষ করতে হয়। এতে প্রচুর খরচ হয়। কিন্তু ওই চাষ করতে গিয়ে চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়লে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় না। পঞ্চায়েত সমিতি ব্যবস্থা নেবে কী?

আদিত্য ঘোষ, লাহারপাড়া

আলু চাষে সরকারি ভর্তুকি মেলে না। তবে চাষের ক্ষেত্রে বিমা করতে পারলে ক্ষতি হলে সেই ক্ষতি অনেকটা পূরণ হয়। কিন্তু জেলায় আলু চাষের উপর এখনও কোনও বিমার ব্যবস্থা নেই। অথচ অন্যান্য জেলায় তা চালু আছে। আমরা আলু চাষের উপর বিমা চালু করার জন্য বহুবার কৃষি দফতরের কাছে আর্জি জানিয়েছি। ফের ওই একই দাবি জানাব।

এলাকার মোড়গুলিতে পথবাতির ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামের রাস্তাগুলিতে পথবাতি না থাকার কারণে অন্ধকারে ডুবে থাকে রাস্তাঘাট। গ্রামের রাস্তাগুলি আলোকিত করার বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি কী উদ্যোগ নিয়েছে?

অর্ণব ত্রিবেদী, বহড়া

পঞ্চায়েত সমিতি ওই বিষয়ে প্রথম থেকেই চেষ্টা করছে। কিন্তু টাকা মিলছে না। তবুও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে নিজস্ব তহবিল থেকে যাতে রাস্তায় পথবাতি লাগানো যায় সেই উদ্যোগ নিতে বলেছি। সঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার উপর দিয়েই নোংরা জল বয়ে যায়। এমনকী বহু রাস্তা আছে যেখানে সারা বছরই জল জমে থাকে শুধুমাত্র নিকাশিনালা না থাকার কারণে। পঞ্চায়েত সমিতি নিকাশিনালার বিষয়ে কী ভাবছে?

মানস রায়, লাহারপাড়া

বহুরাস্তা আছে যেখানে এখনও নিকাশির ব্যবস্থা নেই। তাতে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের অনেক ক্ষেত্রে অসহযোগিতার কারণে আমরা ওই নালা করতে পারছি না। কেউ পুকুরে ওই জল ফেলতে দিচ্ছেন না কেউ আবার বাড়ির পাশ দিয়ে ওই নালা নিয়ে যেতে দিচ্ছেন না। বাসিন্দারা যদি সহযোগিতা না করলে ওই নালা তৈরি করা আমাদরে পক্ষে অসম্ভব।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। চিকিৎসকের দেখা মেলে না। ফলে কেউ অসুস্থ হলে কান্দিতে নিয়ে যেতে হয়। অথচ এলাকায় চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার জন্য কোয়ার্টার আছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় সরকার কেন এত উদাসীন?

ছোটন শর্মা, পুরন্দরপুর

এটা আমাদের এলাকার একটি বড় সমস্যা। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যেক উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি দশ বেডের ব্যবস্থা করার সাথে ওই কেন্দ্রে যাতে নিয়মিত সন্তান প্রসব হয় সেটা চালু রাখার জন্য সময়ের জন্য একজন চিকিৎসক রাখার আর্জি জানিয়েছি। আমরা দাবি জানানোর পরেই কিছু চিকিৎসক ব্লকে এসেছেন। আগামী দিনে ওই দাবি আবারও স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে তুলে ধরব।

এলাকার অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে যেখানে বর্ষায় ছাদ চুঁয়ে জল পড়ে। দরজা, জানালা না থাকায় ওই সব কেন্দ্রে অসামাজিক কাজকর্মও হচ্ছে। ওই কেন্দ্রগুলিতে সংস্কার করে নিরাপত্তার বিষয়ে পঞ্চাতের সমিতি কী উদ্যোগ নিয়েছে?

দিলীপ মণ্ডল, জিয়াদার

ওই দফতরের কর্তাদের বলেছিলাম এলাকার যেসব কেন্দ্রগুলি সংস্কারের প্রয়োজনিয়তা আছে সেই সব কেন্দ্রগুলির একটি তালিকা দিতে বলে ছিলাম। এখনও সেই তালিকা পাইনি। পেলে কাজ শুরু হবে।

একশো দিনের প্রকল্পের কাজ এখন অনেক গ্রামে হচ্ছে। আবার অনেক গ্রামে ওই কাজ থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে। আবার ওই প্রকল্পের কাছে কখনই যন্ত্রাংশের ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু অনেক গ্রামে যন্ত্রের দ্বারা কাজ হচ্ছে। পঞ্চায়েত কোনও ব্যবস্থা নেবে কী?

অষ্টম মণ্ডল, মোল্লা

একশো দিনের কাজে ওই এলাকার বাসিন্দা বা পঞ্চায়েতের সদস্যকে কাজের দাবি জানাতে হয়। না জানালে ওই প্রকল্পের কাজ হয় না। আর যন্ত্রাংশ নিয়ে কোন এলাকায় কাজ হচ্ছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement