জ্যোতি বসু।—ফাইল চিত্র।
তখনও ভরা বাম আমল। প্রায় দেড় দশক আগে গয়েশপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি হয়েছিল জ্যোতি বসু ভবন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক দিন ধরেই তা এখন বেহাল। ভবনের দরজা খোলা হয় না গত কয়েক বছর ধরে। অনাদরে পড়ে থাকায় বাড়ির অবস্থাও দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। মূল ফটক তালা মারা থাকে। পাঁচিলে আশপাশের লোকজন জামাকাপড় শুকোতে দেয়।
সদনের চর্তুদিক জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। আগাছায় ভরা ওই জায়গায় এলাকার লোক ঢুকতেই ভয় পায়। ‘সদন’ শব্দটিও প্রায় মুছে গিয়েছে। ভবনে ঢোকার গেটগুলি বহু দিন ধরে বন্ধ থাকায় জং ধরে গিয়েছে। পুরসভার একাধিক বিদায়ী কাউন্সিলর জানাচ্ছেন, এই সদনে এক সময় শীতকালে প্রায়ই অনুষ্ঠান লেগে থাকত।
কল্যাণী পুরসভা চত্বরে ঋত্বিক সদনের আদলেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের প্রবাদপ্রতিম নেতা জ্যোতি বসুর নামে এই সদন তৈরি করা হয়েছিল। কয়েকশো চেয়ার রয়েছে ভিতরে। কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার পরেও সদনটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি। সদনের ছাদের অবস্থাও খারাপ। বৃষ্টির জল ভিতরে ঢোকে। বেশ খারাপ মূল মঞ্চের অবস্থাও। ব্যবহার না হওয়ার কারণে সেই মঞ্চ ও চেয়ারগুলি দিন-দিন ব্যবহরের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে বলে পুরসভারই এক আধিকারিক জানাচ্ছেন। গয়েশপুর পুরসভা অবশ্য বছর দুয়েক আগে এক বার সদনটির সংস্কারে আংশিক উদ্যোগী হয়েছিল। এক বিদায়ী কাউন্সিলরের দাবি, বহু গড়িমসির পরে তৎকালীন পুরপ্রধান তথা বর্তমানে গয়েশপুর পুরসভার বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চেয়ারপার্সন মরণকুমার দে সদনটি সারানোর জন্য সামান্য টাকা বরাদ্দ করেন। সেই সময় সদনের ছাদ সংস্কার করতে গিয়ে নীচে পড়ে দু’জন শ্রমিক মারা যান। তার পর থেকেই সংস্কারের কাজ বন্ধ। অথচ বেদিভবন চত্বরে ছোট-বড় বহু সাংস্কৃতিক সংস্থা রয়েছে। আশপাশে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সদন বন্ধ থাকার ফলে তাদের অনুষ্ঠান করতে সমস্যায় পড়তে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজু বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই শহরের দুটো দিক রয়েছে। আমাদের এ দিকে জ্যোতি বসু সদন ছিল। সেটা বন্ধ। আর মূল গয়েশপুরের দিকে বছরখানেক আগে সুকান্ত মঞ্চ হয়েছে। সেখানে যেতে কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। বাড়ির কাছে এত বড় একটা পরিকাঠামো অনাদরে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবলেই কষ্ট হয়।’’ এলাকারই অনেকেরই বক্তব্য, লকডাউন অনেকটাই শিথিল হয়েছে। এ বার সদনটি দ্রুত সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে মরণকুমার দে বলেন, ‘‘পুরসভা ওই সদনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু কাজও হয়েছে। তবে বেশির ভাগ কাজই বাকি। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের আগে কোনও নতুন কাজ শুরু করা যাবে না। তার পরে ওই সদনের ভোল পাল্টে ফেলা হবে।’’