জঙ্গিপুর পুর-এলাকায় এটাই চেনা ছবি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
আবারও একটা পুরভোট। ভোটের আগে নিয়ম করে জঙ্গিপুর শহরকে শুয়োর-মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয় ডান-বাম সবপক্ষ। শহরে শুয়োরের অবাধ গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইকোর্টও নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ভোট মরসুম পার হলেই পুরকর্তারা সে সব বেমালুম ভুলে যান। শহর জুড়ে পুনরায় ঘোরাফেরা শুয়োরের পাল। এ বারের ভোটের আগে শহর থেকে শুয়োর তাড়ানো নিয়ে ফের শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। পুর-নাগরিকেরাও ভোটের আগে শুয়োর তাড়ানো নিয়ে পুনরায় সরব হয়েছেন।
রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্কবার্তা জারির অঙ্গ হিসেবে সরকার শুয়োর সাফাই অভিযান ঘোষণা করেছে বার বার। পুরসভা ও প্রশাসনকে রাস্তা-ঘাট শুয়োরমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সে সব নির্দেশ পৌঁছয় না মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুরসভার কানে। পুরসভা শুয়োর তাড়ানোর জন্য মাইকে নাগরিকদের সাহায্য করার কথা বলেই দায় সারে বলে অভিযোগ বিরোধীপক্ষ ও ভোটারদের একাংশের। লোকালয় থেকে দূরে খোয়াড়ে শুয়োর চাষ করার কথা। কিন্তু সে সব মানা হচ্ছে না। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শতাব্দী প্রাচীন এই শহরে সকাল-সন্ধ্যায় অলিতে-গলিতে, মায় প্রকাশ্য রাস্তাতেও চলাফেরা করে শুয়োর। খোদ জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের আবাসন চত্বরেও দিন-রাত ঘুরে বেড়ায় শুয়োর। শহরের বাসিন্দা সুজাতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে শুয়োরের উপদ্রবে আমরা অতিষ্ঠ। প্রতিবার ভোটের আগে এ নিয়ে শহরের রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। কিন্তু ভোট ফুরোলেই সবপক্ষ প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়। পুরসভাকে বার বার শুয়োরের উত্পাতের ব্যাপারে জানিয়েও কোনও ফল হয় না। তবে এক সময় মহকুমাশাসক ছোটেন ডি লামা এ ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করেন। কিন্তু তিনি বদলি হওয়ার পর আবার আগের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে।” শহরের আর এক বাসিন্দা বীণাপানি সাহার বক্তব্য, ‘‘মাঝে মধ্যেই শুয়োর মরে পরে থাকছে বাড়ির পাশের নর্দমায়। এত শুয়োর কোথা থেকে আসছে, কে বা কারা এই ব্যবসা চালাচ্ছে সব তথ্যই রয়েছে পুরসভার হাতে। আসলে পুর-কর্মীদেরই একাংশ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।”
পুরসভার ১৪ নম্বরে ওয়ার্ডে শুয়োরের দাপাদাপি মাত্রাতিরিক্ত। এই ওয়ার্ডেই থাকেন কংগ্রেস কাউন্সিলর বিকাশ নন্দ। তিনি অবশ্য এ বার লড়ছেন পাশের ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর থেকে। তিনি এই চারপেয়েদের এই উত্পাতের জন্য ক্ষমতাসীন বামশাসিত পুরবোর্ডকেই দায়ী করছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুরসভার সক্রিয়তার অভাবেই এই উপদ্রব দিনের পর দিন সহ্যাতীত হয়ে যাচ্ছে। হাইকোর্টে এক জনস্বার্থ মামলায় পুরসভাকে তলব করেছিল। তখন পুরসভা হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল ভবিষ্যতে লোকালয়ের বাইরে খোয়াড়ে যাতে শুয়োরের ব্যবসা সীমিত তা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে পুরসভা তা করেনি।’’ কিন্তু আপনারা ক্ষমতায় এলে কী এই সমস্যার সমাধান হবে? বিকাশবাবু বলেন, “আমরা ভোটে জিতলে নিশ্চয়ই এই বেআইনি ব্যবসা বন্ধ করব।” শুয়োরের দাপাদাপিতে রুষ্ট নাগরিক সমাজও। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কাশীনাথ ভকত সাফ বলছেন, ‘‘শহর জুড়ে শুয়োরের দাপট নিয়ে সকলেই রীতিমত উদ্বিগ্ন। পুরসভা এই কারবারের নাড়ি-নক্ষত্র জেনেও নিশ্চুপ। কারণ, এই ব্যবসায় হাত রয়েছে কিছু পুরকর্মীর।”
শুধু শুয়োরের উত্পাতই নয়, লোকজনের অভিযোগ আসলে জঙ্গিপুর শহরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতেই কিছু নেই। বহুদিনের দাবি সত্ত্বেও আজও শহরে তৈরি হল না মাতৃসদন। শহরে কোনও নামী চিকিত্সকের দেখা মেলে না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের খাসতালুকের ‘কমরেড’ দিনকয়েক আগে দল ছেড়েছেন মোহন মাহাতো। তিনি বলেন, “বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দায় এড়াতে পারে না ক্ষমতাসীন পুরবোর্ড।” জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম অবশ্য ভোটের আগে সাফাই গাইতে ব্যস্ত। তিনি বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশমত শুয়োর দমনে পদক্ষেপ করা হয়েছে। নিজেও শুয়োর ধরতে রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু এই সমস্যার পুরো সমাধান করা যাচ্ছে না। শহরে স্বাস্থ্য ক্লিনিক করা হয়েছে।”