ভাঙনের সমস্যাই ছায়া ফেলবে ভোটে, ধারণা সব দলেরই। নিজস্ব চিত্র।
কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হকের রিপোর্ট কার্ডে ইতিমধ্যেই জমা হয়ে রয়েছে পাঁচ পাঁচ বার জয়ের শংসাপত্র। বাম আমলে বহু চেষ্টা করেও তাঁকে সরাতে পারেনি বামেরা। টলাতে পারেনি ঘাসফুলও। এখন তো বাম-কংগ্রেস জোটে। তাই ফরাক্কায় তাকে হারানো কঠিন এটাই যেন বিশ্বাস করে ফেলেছেন অনেকেই। তাই খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও মাস খানেক আগেই এই বিশ্বাসে ভর করেই সভা করে বলে গিয়েছেন “২৯৪ টি আসনের মধ্যে ফরাক্কার আসনটি কংগ্রেস পেয়ে গিয়েছে ধরে নিন।” কিন্তু অধীর বলে গেলেও মইনুলের জয় মেনে নিতে রাজী নয় তৃণমূল। এমনকি বিজেপিও।
সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসেছেন অরুণময় দাস। তিনি বলছেন, “অতীতের কথা বাদ দিন। ফরাক্কায় তৃণমূল আছে। ৮০ শতাংশ তৃণমূলকে এক জায়গায় করা গেলে মইনুল হককে হারানো কোনও বড় কথা নয়। আমরা সেটাই চেষ্টা করছি। বিশ্বাস করি তা পারব।’’ কিন্তু সমস্যাও রয়েছে। তৃণমূল সূত্রেই খবর, ফরাক্কায় তিন জন দলীয় নেতা নিজেরাই স্বঘোষিত প্রার্থী বলে ভাবছেন নিজেদের। সমস্যাটা এখানেই। তিনি বলছেন, ‘‘এদের মধ্যে কেউ একজন প্রার্থী হলে অন্য দু’জন মইনুল হকের হয়ে ভোট করবে। তিন জনই বোঝাপড়া করে চলছেন কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে। এই চরিত্রের বদল দরকার। আর তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ফরাক্কায় যদি ধুলিয়ানের এক নেতাকে দাঁড় করানো যায় তবে মইনুল হককে হারানো সম্ভব। দলকে সেটা বলা হয়েছে।”
তাঁর কথায়, “বিজেপি ফরাক্কায় অবশ্যই আছে। তবে তারা নির্ধারক শক্তি বই কিছু নয়। বিজেপি ৪৫ হাজার ভোট টানতে পারলে মইনুল হককে হারানো সম্ভব। বিজেপি তার কম পেলে সমস্যা।”
বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে তৃতীয় শক্তি ছাড়া ভাবতেই রাজি নয়। দলের জেলা সভাপতি সুজিত দাস বলছেন, “ফরাক্কা আমাদের টার্গেট আসন। লোকসভায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। গত এক বছরে বিজেপির শক্তি আরও বেড়েছে ফরাক্কায়। তাই ফরাক্কায় ১২ জন আবেদন করেছেন প্রার্থী হওয়ার জন্য। এই আগ্রহ ফরাক্কায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির সুফল।”
সুজিতবাবুর মতে, মইনুল হক ২৫ বছর বিধায়ক ফরাক্কায়। কী করেছেন ফরাক্কার জন্য?
ফরাক্কায় নদী ভাঙন নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। কোটি কোটি টাকা লুটে খায় ঠিকাদারেরা। অভিযোগ, ব্যারাজ হাসপাতাল অচল। ফরাক্কা ব্যারাজ স্কুল ধুঁকছে।
রাজ্য সরকারের ব্লক হাসপাতাল বলে কিছু নেই ফরাক্কায়। প্রাথমিক হাসপাতালকে ব্লক হাসপাতাল বলে চালানো হচ্ছে। ফরাক্কা ব্যারাজ, এনটিপিসি জুড়ে মাফিয়া রাজ চলছে। লক্ষ লক্ষ টাকা তোলাবাজি হচ্ছে। বিজেপির প্রশ্ন, এগুলো কারা করছে? সুজিত বলেন, ‘‘কাজেই ২৫ বছর টিকে থাকলেও কংগ্রেসকে এ বার লাল কার্ড দেখাবে মানুষ।’’
বিধায়ক মইনুল হক অবশ্য বলছেন, “মানুষ আমাকে ভোট দেয় কেন, সেটা সাধারণ মানুষকেই জিজ্ঞেস করুন। মানুষের পাশে থাকা, বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো, সকলকে নিয়ে চলাই তো সব চেয়ে বড় সাফল্য একজন রাজনীতিকের জীবনে। এটাই আমার রিপোর্ট কার্ড। কংগ্রেস বিরোধী দল, রাজ্যে এবং কেন্দ্রেও। কাজ করার ক্ষমতা সীমিত। তবু ভাঙন থেকে ফরাক্কার সবকিছুতেই সাধ্য মতো যা করার তা চেষ্টা করেছি।’’
তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস দলের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই ফরাক্কায়। ভোটের এখনও সময় আছে। তাই গ্রামে গ্রামে ঘোরার কাজ শুরু করেছি। তবু একটা সমস্যা, সংখ্যালঘু এলাকায় রোজার মাসে ভোট। তবে জয় নিয়ে ভাবনা নেই।’’