এ বার ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচার চালাতে পুলিশ রঘুনাথগঞ্জের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে যেতে শুরু করল।
পুলিশের মতে “বাইরে প্রচার তো চলছেই। এর পাশাপাশি যদি ছোটরাও বাইক নিয়ে বেরোবার আগে বাবার হাতে হেলমেটটা ধরিয়ে দিতে পারে, তা হলে কোনও অবস্থাতেই শিশুর কথা উপেক্ষা করতে পারবে না বাবা, কাকা, দাদুরা।” সেই ভাবনা থেকেই রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ এ বার এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে হানা দেওয়া শুরু করল। শুক্রবার সরাসরি রাজানগর প্রাথমিক স্কুলে যখন হাজির হলেন রঘুনাথগঞ্জ থানার আইসি ও অন্যান্য অফিসারেরা তখন স্কুলে চলছে মিড-ডে মিল খাওয়ার প্রস্তুতি। স্কুলের ডাইনিং হলে থালা সাজিয়ে বসে পড়েছে শিশুরা। প্রায় ১৬৭ জন ছাত্র-ছাত্রী। গোটা ডিম দিয়ে আলুর তরকারি, ডাল, ভাত।
খাবার ঘরে পুলিশ দেখে কিছুটা ঘাবড়ালেও দু’চারটি কথা হতেই ভয় কাটল শিশুদের। হয়ে গেল ‘পুলিশকাকু’। আর সুযোগ বুঝে তখনই শুরু হল সেফ ড্রাইভের গল্প।
আইসি সৈকত রায় তখন প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন। কার কার বাড়িতে মোটরবাইক আছে? কে চালায়? – কথার পিঠে কথা। হেলমেট কি জানো? দেখেছ কেউ? শুরু হল এ ওর মুখ চাওয়া চায়ি।
তোমাদের প্রধান শিক্ষক কীসে আসেন? সমস্বরে উত্তর, “মোটর সাইকেলে।” উনি মাথায় কিছু পরেন? বলেই প্রধান শিক্ষকের হেলমেটটা তুলে ধরলেন তাদের সামনে।
বললেন, “এটাই হল হেলমেট। বাইক থেকে পড়ে গেলে হেলমেট মাথায় থাকলে মাথায় আঘাত লাগে না। আর না পরলে মাথা ফেটে রক্ত পড়বে। মাথায় লাগলে মানুষের বেঁচে থাকা মুশকিল।” পিছন থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বলে উঠল, “কাকু আমার বাবা তো রোজ হেলমেট পরেই যায় বাইক নিয়ে।”
কথাটা যেন লুফে নিলেন আইসি। বললেন, “এ বার থেকে এটাই করতে হবে তোমাদের। বাবা, দাদা, দাদু বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে বেরোলেই তাঁর হাতে ধরিয়ে দেবে হেলমেটটা। বলবে হেলমেট ছাড়া বাইক নিয়ে বেরোবে না। তারা না শুনলে জোর করবে। এখন থেকে বাড়িতে বাইকের পাহারাদার তোমরাই।”
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচারে নেমে রাখি বন্ধন থেকে গোলাপ শুভেচ্ছা, বাইক থামিয়ে হেলমেট পরানো থেকে পেট্রল পাম্পে তেল বন্ধ— বাদ যায়নি কিছুই। কন্যাশ্রীদের রাস্তায় নামিয়ে প্রচারেও হুঁশ ফেরেনি বাইক চালকদের। জঙ্গিপুরে কয়েকশো হেলমেটহীন বাইক আটকেছে পুলিশ গত দু মাসে। তাতেও পুরোপুরি সচেতনতা ফেরেনি। এমনকী বৃহস্পতিবার রাতেও রঘুনাথগঞ্জ শহরে বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক বাইক চালকের দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে, যাঁর মাথায় হেলমেট দেখা যায়নি।
রঘুনাথগঞ্জ থানার আইসি সৈকত রায় বলেন, “আসলে হেলমেট পরাটা যে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই জরুরি, এই বোধটাই গড়ে ওঠেনি এখনও সকলের মধ্যে। আইনের পথে ধরপাকড় করে এই উদাসীনতা কাটানো যাবে না। জোর দিতে হবে সচেতনতা তৈরির উপরেই। সেই কারণেই এ বার পরিবারের দরজায় পাহারাদার হিসেবে তাদেরই শিশুদের দাঁড় করিয়ে দিতে চাইছি আমরা।”
গ্রামের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে গিয়ে শিশুদের কাছে এই প্রচারকে পুলিশের ভাল উদ্যোগ বলেই মনে করছেন রাজানগরের প্রবীণ শিক্ষক অখিল দাস। বলেন, “আমার নাতনি শিখা দাস বাড়িতে এসেই বলেছে দাদু তুমি হেলমেট না পড়ে মোটর সাইকেল চালাবে না। আজ স্কুলে পুলিশ কাকু এসে বলে গিয়েছে। এটা বেশ ভাল উদ্যোগ।”
যাওয়ার পথে পুলিশকাকুরা প্রধান শিক্ষককে বললেন, “মাস্টারমশাই যতই ব্যস্ততা থাক, হেলমেটটা কিন্তু পরেই যাতায়াত করবেন।”
পরের গন্তব্য তেঘরি।