কড়া পদক্ষেপের বার্তা পুলিশের

কয়েক দিন ধরে হরিহরপাড়া, নওদা, দৌলতাবাদে রেশন দোকানে চড়াও, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের বাড়ি ঘেরাওয়ের মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৯
Share:

এভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পুলিশ হিমশিম খায় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

পিছু ছাড়ছে না ভয়ের ‘ভূত’!

Advertisement

আর সেই ভূতের দৌরাত্ম্যে রেশন ডিলার, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের কাজ শিকেয় ওঠার জোগাড়। গত কয়েক দিন ধরে হরিহরপাড়া, নওদা, দৌলতাবাদে রেশন দোকানে চড়াও, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের বাড়ি ঘেরাওয়ের মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল থেকেও হরিহরপাড়ার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বাড়িতে চড়াও হয়ে তথ্য সংগ্রহের কারণ জানতে চেয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এ দিন বিকেলে ডোমকলের শিবনগরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীকে আটরে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে গ্রামের কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

এ দিন সকালে হরিহরপাড়ার শঙ্করপুরে রেশন ডিলার অর্ধেন্দু প্রামাণিকের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা। তাঁদের দাবি, কী কারণে তাঁদের কাছ থেকে আধার নম্বর এবং আধার কার্ডের প্রতিলিপি নেওয়া হয়েছে তার জবাব দিতে হবে। পরে খাদ্য সরবরাহ দফতরের নির্দেশ দেখালে ক্ষান্ত হয় জনতা। তবে অকারণ এমন সব ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, কিছু লোক অকারণে ভয় পাবেন এবং অশান্তি করবেন, বাড়ি ঘেরাও করবেন, মারধর করবেন— এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের উচিত এ ব্যাপারে এ বার কঠোর হওয়া।

Advertisement

তবে একের পর এক এমন ঘটনা পুলিশ ও প্রশাসন হালকা ভাবে নিচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে। এ দিন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলেন, ‘‘যাঁরা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। অভিযুক্তদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’

জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলছেন, ‘‘সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী বা অন্য কর্মীরা যাতে বাধার মুখে না পড়েন, তার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নানা ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ ও কুটির শিল্প দফতরের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের হরিহরপাড়া ব্লক সভাপতি সামসুজ্জোহা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরাও নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। তার জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে। তাই বলে অযথা সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা বা স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থার ঘটনা মেনে নেওয়া যাবে না।’’

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, এ রাজ্যে নয়া নাগরিকত্ব আইন লাগু হবে না। ফলে সাধারণ মানুষের অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’’ ইতিমধ্যে ইমাম, মোয়াজ্জিনেরাও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও কিছু লোকজন অকারণ অশান্তি করছেন বলেই অভিযোগ। আর সেই কারণে ইন্দ্রধনুষ টিকাকরণ কর্মসূচি থেকে মশাবাহিত রোগের সমীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বন্ধ রয়েছে খাদ্য সুরক্ষা তালিকার সঙ্গে আধার নম্বর সংযুক্তকরণের কাজও।

স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের সঙ্গে বা রেশন দোকানে খাদ্যসুরক্ষা কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর সংযুক্তিকরণের সঙ্গে নয়া নাগরিকত্ব আইনের যে কোনও সম্পর্ক নেই সে কথা সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে রবিবার বিকেলে হরিহরপাড়ার ইমাম মোয়াজ্জিন, ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট লোকজনকে নিয়ে হরিহরপাড়া থানায় বৈঠক করেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘সর্বস্তরের মানুষের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement