মৃত তহিদ করিম। —ফাইল ছবি
মায়ের হাতে তৈরি ছোলার ছাতু খেতে চেয়েছিল ছেলে। আবদার রাখতে ঘরের ছাতু আর তিলের নাড়ু নিয়ে কলেজ হস্টেলে পৌঁছে পেশায় গাড়ির চালক বাবা জানতে পারেন হস্টেলের একটি বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে ছেলের ঝুলন্ত দেহ। নিহত পড়ুয়ার পরিবারের অভিযোগ, অনেক আগে তাদের ছেলের মৃত্যু হলেও তথ্য গোপন করেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানেননি।
গত বুধবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে শাসকদলের বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাকির হোসেনের জাকির হোসেন ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসির একটি বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয় তহিদ করিম নামের এক পড়ুয়ার দেহ। কলেজ কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও, ছেলের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন এবং মৃত্যুর ধরন দেখে খুন বলে দাবি মৃত ফার্মাসি পড়ুয়ার বাবা রেজাউল করিমের। রেজাউলের কথায়, “ছেলের অনেক আগে মৃত্যু হলেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমরা যাওয়ার পর যখন ছেলেকে নামানো হল, দেখলাম শরীরে পচন ধরতে শুরু করেছে। পুলিশকে জানালেও গুরুত্ব দেয়নি। উল্টে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খুলতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ইতিমধ্যেই মৃত পড়ুয়ার দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনের কোনও প্রাথমিক প্রমাণ না মেলায়, পরিবারের অভিযোগ গুরুত্ব দিতে নারাজ পুলিশ। জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার আনন্দ রায় জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এসেছে। তদন্ত চলছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলেই এই বিষয়ে অতিরিক্ত কিছু বলতে চাননি পুলিশ সুপার।
মালদহের ইংরেজবাজার থানার যদুপুরের বাসিন্দা তহিদের মৃত্যুতে তাঁর গ্রামেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকার ছেলের মৃত্যুতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে ক্ষোভও। আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রসঙ্গে মৃত তহিদের এক পড়শি আনারুল বিশ্বাস বলেন, “আমরা তো কলকাতার মানুষ নই। পৃথিবীর বাইরে মালদহের বাসিন্দা। কলেজ হস্টেলে র্যাগিং করে আমাদের পাড়ার ছেলেকে খুন করা হল, তা নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা আছে? আজ এটা যদি কলকাতায় হত, তা হলে হয়তো তহিদের জন্য বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়ে যেত।”