জনতার ‘রোষ’ থেকে বাঁচতে। রবিবার নবদ্বীপে। —নিজস্ব চিত্র।
ঝোপের মধ্যে পড়ে রয়েছেন এক পুলিশকর্মী। তাঁকে ঘিরে রয়েছে উত্তেজিত জনতা। প্রাণ বাঁচাতে ঝোপের মধ্যে আরও ঢুকে গেলেন ওই পুলিশকর্মী। পরে জনতারই মধ্যে দু’একজন এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করলেন ওই পুলিশকর্মীকে। রবিবার সকালে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী রইল নবদ্বীপের গৌরনগর। মোবাইলে ঘুরতে সেই ঘটনার ভিডিয়ো। যদিও পুলিশের কোনও কর্তাই পুলিশকর্মীর ঝোপে পড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতু ও গৌরনগর মোড়ের মাঝে কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ রাজ্য সড়কে লরির ধাক্কায় মারা যান ঝন্টু মণ্ডল (২০) নামে এক যুবক। সেই খবর ছড়িয়ে পড়লে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। নবদ্বীপ থানার পুলিশ অবরোধ তুলতে যায়। তখনই উত্তেজিত জনতা তাদের তাড়া করে। তাড়া খেয়ে পালানোর সময় এক পুলিশকর্মী রাস্তার পাশে এক ঝোপের মধ্যে পড়ে যান বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গৌরাঙ্গ সেতুর মুখে পুলিশ প্রায়ই গাড়ি থেকে ‘তোলা’ আদায় করে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ওই জায়গায় চালকেরা গতি বাড়িয়ে দেন। অভিযোগ, এ দিনও তেমনই এক বালি বোঝাই লরি আচমকা গতি বাড়িয়ে পালাচ্ছিল। পিছনে পুলিশও তাড়া করে। পালাতে গিয়ে লরিটি সাইকেল আরোহী ওই যুবককে চাপা দেয়। যদিও পুলিশের দাবি, বালি বোঝাই লরিটি ‘ওভারলোড’ ছিল। দাঁড়াতে বললেও চালক লরি না থামিয়ে উল্টে গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখনই ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ কোতোয়ালির আনন্দবাস গ্রামের বাসিন্দা ঝন্টু মণ্ডল (২০) নামে ওই যুবক সাইকেলে চেপে পেয়ারা কিনতে যাচ্ছিলেন। সে সময় একটি বালি বোঝাই লরি তাঁকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই যুবক। এর পরেই ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তা চলে। এ দিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে নবদ্বীপ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর চড়াও হয় ক্ষিপ্ত জনতা। পুলিশকর্মীরা পিছু হটেন। তখনই এক পুলিশ কনস্টেবল রাস্তার পাশের ঝোপে পড়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে আসে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। কৃষ্ণনগর থেকে ডিএসপি-‘ডি অ্যান্ড টি’র নেতৃত্বে কমব্যাট ফোর্স-সহ বিশাল পুলিশবাহিনীও ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আসেন নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। শেষে পুলিশ এবং পুরপ্রধানের থেকে পথ নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে জনতা অবরোধ তুলে নেয়। স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, পুলিশ প্রশাসন সতর্ক থাকবে।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে এ দিন জেলার পুলিশ সুপার জাফর আজমল কিদআইকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোর করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি এসএমএস-এরও।
২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে একই ভাবে ডাম্পারের ধাক্কায় মারা গিয়েছিলেন মোটরবাইক আরোহী এক যুবক। সে বারেও স্থানীয়েরা অভিযোগ তোলেন, পুলিশের ‘তোলা’র হাত থেকে বাঁচতে চালক ডাম্পারের গতি বাড়িয়ে দেন এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই যুবককে ধাক্কা মারে। ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা থানায় চড়াও হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া পুলিশের গাড়িতে। জেলা পুলিশ অবশ্য পুলিশের ‘তোলা’ আদায়ের কথা স্বীকার করেনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।