নামের ফেরেই চালান শ্রীঘরে

দু’জনেরই নাম এক। পদবি এক। বাবার নাম আলাদা। কিন্তু চোরের বাবার নিয়ে কোন পুলিশেরই বা মাথাব্যথা থাকে! রঘুনাথগঞ্জের বড়জুমলা গ্রামের আনারুল শেখ তাই চালান হয়ে গিয়েছে শ্রীঘরে। যদিও তার বাড়ির লোকের দাবি, সে আদৌ চোর-টোর নয়। নিতান্ত গোবেচারা। শুধু নাম দেখেই তাকে তুলে এনেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

আনারুলের মা ও স্ত্রী। (ইনসেটে) ধৃত আনারুল শেখ।—নিজস্ব চিত্র

দু’জনেরই নাম এক।

Advertisement

পদবি এক।

বাবার নাম আলাদা।

Advertisement

কিন্তু চোরের বাবার নিয়ে কোন পুলিশেরই বা মাথাব্যথা থাকে!

রঘুনাথগঞ্জের বড়জুমলা গ্রামের আনারুল শেখ তাই চালান হয়ে গিয়েছে শ্রীঘরে। যদিও তার বাড়ির লোকের দাবি, সে আদৌ চোর-টোর নয়। নিতান্ত গোবেচারা। শুধু নাম দেখেই তাকে তুলে এনেছে পুলিশ। কোনও আপত্তিতে কান দেয়নি।

মঙ্গলবার আনারুলের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লালগোলা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে বহরমপুর আসেন আনারুলের বৃদ্ধা মা সাদেকা বেওয়া। কিন্তু পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের সঙ্গে তাং‌দেঁর দেখা হয়নি। তাঁরা একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যাকে খোঁজা হচ্ছে সেই আনারুল শেখেরও বাড়ি বড়জুমলা গ্রামে। তবে অভিযুক্ত আনারুলের বাবার নাম বাশেদ শেখ। আর যাঁকে ধরে আনা হয়েছে তাঁর বাবার নাম বাশির শেখ।

সাদেকা বেওয়ার আক্ষেপ, ‘‘রাতে লালগোলা থানার ছ’জন পুলিশ এসে আমার ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে ধরে নিয়ে যায়। এত করে বললাম যে আমার ছেলে দিনমজুরি করে কোনও রকমে খেটে খায়। তার নামে থানায় কোনও মামলা নেই। পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেছি যাতে ছেলেকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ কোনও কথা শোনেনি।’’

আনারুলের স্ত্রী কাশ্মীরা বিবির অভিযোগ, ‘‘শ্বশুরের নাম বশির শেখ জানিয়ে ভোটার কার্ডও বের করে পুলিশকে দেখাই। কিন্তু পুলিশ খাটের উপরে ভোটার কার্ড ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়।’’

আনারুলের আইনজীবী মোতাহার হোসেন রিপন জানান, রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দা হলেও অভিযুক্ত আনারুল শেখ হাওড়ায় থাকে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় চুরি ও ৪১৩ ধারায় পেশাদার চোরের মামলা রুজু করেছিল হাওড়া থানার পুলিশ। সেই আনারুল পলাতক। হাওড়া সিজেএম আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আগামী ২২ অগস্টের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিল। লালগোলা থানার কাছে সেই নির্দেশ আসে। আনারুলের আইনজীবীর দাবি, হাওড়া সিজেএম আদালত ‘ভুল করে: লালগোলা থানাকে নির্দেশ পাঠিয়েছিল। লালগোলা থানার উচিত ছিল জানিয়ে দেওয়া যে ওই এলাকা লালগোলার থানার মধ্যে পড়ে না। সে ক্ষেত্রে রঘুনাথগঞ্জ থানার দায়িত্ব হত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করানোর।

লালগোলা থানার পুলিশ কেন তা করেনি, তার সদুত্তর মেলেনি। গত ১২ অগস্ট গভীর রাতে লালগোলা থানার পুলিশ আনারুল শেখ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। পরের দিন, ১৩ অগস্ট লালবাগ এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে তাঁকে আট দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পর থেকে ওই যুবক লালবাগ উপ-সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন। কিন্তু পরে আদালতে হাজির করানো হলে বিচারকের সামনে নাম বিভ্রাটের বিষয়টি কেন বললেন না ওই যুবক? আইনজীবী মোতাহার হোসেনের দাবি, ‘‘আনারুল এতটাই নিরীহ যে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসায় হতবাক হয়ে যায়। আদালতে দাঁড়িয়ে কোনও কথা বলতে পারেনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরক্ষর, সচেতনতারও অভাব রয়েছে। ফলে তাঁরাও বিষয়টি আমাকে জানাতে পারেনি। ফলে আদালতে বিষয়টি জানানো যায়নি।’’

কী বলছে পুলিশ?

লালগোলা থানার ওসি পিন্টু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলেটিকে গ্রেফতার করে আনার পরে তার বাড়ির লোকজন বলেন, ভুল লোককে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। যে রাতে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়, তার পরের দিনও যদি পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানাতেন তাহলে হয়তো ছেড়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এখন কিছু করার নেই।’’ বারবার মোবাইলে ফোন করা সত্ত্বেও পুলিশ সুপার তা ধরেননি, এসএমএসের জবাবও রাত পর্যন্ত দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement