আক্রান্তদের বেশির ভাগের বয়স পাঁচ বছরের নীচে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বাড়ছে শিশুদের নিউমোনিয়া। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে এমন রোগীদের ভিড় বাড়ায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিশুরোগ বিভাগে ২০টি অতিরিক্ত শয্যা যোগ করা হল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। ওই হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা এখন ৮০টি । কিন্তু তার পরেও হাসপাতালে শয্যা-সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত একের পর এক শিশুকে ভর্তি করানো হচ্ছে ব্লক এবং মহকুমা হাসপাতালে। জানা যাচ্ছে, দৈনিক গড়ে ১৫০-র বেশি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। শয্যার অভাবে বাধ্য হয়ে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু মেঝের ঠান্ডায় অসুস্থ শিশুদের শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, নিউমোনিয়া আক্রান্তদের জায়গা দিতে গিয়ে একই শয্যায় দু’-তিন জন শিশুকে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা। কারণ, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। সেই জটিলতা সম্পর্কে অবগত হলেও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিরুপায় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিসংখ্যান বলছে, ৫ বছরের নীচে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার সব চেয়ে বেশি। সাধারণ হাঁচি-কাশি থেকে এই অসুখ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য দিকে, রোগীর চাপে কার্যত দিশেহারা চিকিৎসকেরা। জঙ্গিপুর, লালবাগ, ডোমকল থেকে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল — আক্রান্ত শিশুদের লাইন লেগেই রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের শিশুবিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুদের এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসা করা ছাড়া তো আমাদের উপায় নেই। এই মরসুমে মারাত্মক ভাবে শিশুদের ফুসফুস সংক্রমিত হচ্ছে। বেশ কিছু শিশুর শারীরিক অবস্থা গুরুতর। তাদের অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হচ্ছে।’’ ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। তবে ২০টি শয্যা বাড়ানোর ফলে চাপ কিছুটা হলেও কমবে। অধিকাংশ শিশুর নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় অক্সিজেনের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে।’’ এ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অমিতকুমার দাঁ বলেন, ‘‘মরসুম পরিবর্তনের সময় শিশুদের নিউমোনিয়া হচ্ছে। প্রতি দিন প্রচুর রোগীকে ভর্তি করানো হচ্ছে। আমরা সুস্থ করে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে আরও ২০টি শয্যা বাড়ানো হল। এক একটি শয্যায় দু’টি বা তিনটি শিশুকে রেখে চিকিৎসা করতে হচ্ছিল। এখন শয্যার সংখ্যা ৮০টি হয়েছে।’’
ভোলানাথ কর্মকার নামে এক যুবক তাঁর আত্মীয়ার পুত্রকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য শয্যা পাচ্ছে না অনেক শিশু। ঠান্ডা মেঝেয় রেখে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। এতে অনেকের শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’