কবে হবে পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশ্ন বগুলার

দাবি বলতে একটা পুলিশ ফাঁড়ি। তা নিয়ে কখনও পথ অবরোধ, কখনও বা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান—কোনও কিছুই বাদ রাখেননি বগুলার মানুষ। প্রতিশ্রুতিও মিলেছে অনেক।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

বগুলা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৭
Share:

এই সেই অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। —নিজস্ব চিত্র।

দাবি বলতে একটা পুলিশ ফাঁড়ি। তা নিয়ে কখনও পথ অবরোধ, কখনও বা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান—কোনও কিছুই বাদ রাখেননি বগুলার মানুষ। প্রতিশ্রুতিও মিলেছে অনেক। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির ধাপ পেরিয়ে আজও বগুলায় তৈরি হল না পুলিশ ফাঁড়ি।

Advertisement

২০১৩ সালে একের পর দুষ্কৃতী হানার ঘটনায় এলাকার মানুষ পথ অবরোধ করেছিলেন। রাজনীতি ভুলে সকলে মিলে বগুলাতে একটি পুলিশ ফাঁড়ির গড়ার দাবি তুলেছিলেন। ফাঁড়ি গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাতে বিশ্বাস করে আন্দোলন থেকে সরে এসেছিলেন মানুষ। কিন্তু এখনও সেই ফাঁড়ি তৈরি হয়নি।

রাজনৈতিক কারণে বগুলা বা তার লাগোয়া এলাকা বরাবরই উত্তেজনাপ্রবণ। আশির দশকের আগে থেকেও বগুলায় একের পর এক একের পর এক রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুন আর পাল্টা খুনে অশান্ত হয়েছে বগুলার স্বাভাবিক জীবন। যদিও ইদানীং কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা খুনের ঘটনা ঘটেনি। তবে ভিতরে ভিতরে রাজনৈতিক উত্তেজনা যে ধিকিধিকি করে জ্বলছে তা স্বীকার করেছেন জেলা পুলিশের একাংশ। তার উপরে ক’মাস পরেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরাচ্ছেন বগুলার বাসিন্দারা।

Advertisement

সোনার দোকানে ডাকাতি রুখতে দিয়ে খুন হয়েছিলেন নৈশ্যপ্রহরী মাধব বিশ্বাস। তাঁর ছেলে মৃণাল বিশ্বাস বর্তমানে সিপিএমের বগুলা লোকাল কমিটির সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘ডাকাতি রুখতে গিয়ে খুন হন বাবা। এখনও পর্যন্ত সেই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ ছাড়াও একের পর এক দুষ্কৃতী হানার শিকার হয়েছেন বগুলার মানুষ। যার কোনও প্রতিকার হয় নি। এ দিকে, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আমাদের কর্মীরা যে আক্রান্ত হবেন তা বলাই বাহুল্য। তাই আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বগুলায় পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি হোক।’’

১৯৮৬ সালে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যায় ভরা বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলেন হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের ক্ষৌণিশ বিশ্বাস। সেই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বগুলায় একটি পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করা হয়। এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় সবেধন নীলমণি বলতে বাজারের উপরে বগুলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে অবস্থিত ওই পুলিশ ক্যাম্পটাই। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের। অভিযোগ, দিনের পর দিন শহরে চুরি ছিনতাই বেড়েই চলেছে। তাই একটি পুলিশ ফাঁড়ি চেয়ে ২০০১ সালে বগুলার মানুষ কৃষ্ণনগর-দত্তফুলিয়া রাস্তা অবরোধ করেন। সেই সময়কার পুলিশ সুপার রামফল পাওয়ার বিক্ষোভকারীদের শক্তিশালী পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়িত হয়নি।

ক্ষৌণিশ বিশ্বাসের ভাই শশাঙ্কবাবু বর্তমানে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে বগুলায় একটি পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়েজন। হাঁসখালিতে থানা থাকলেও বগুলাতেই পুলিশের দরকার অনেক বেশি।’’ ফাঁড়ি করতে যে বেশি জায়গা দরকার তা বুঝেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘জায়গার কথা ভেবে আমরা আশ্রমপাড়া এলাকায় একটি জমিও দেখে রেখেছি। সুতরাং জায়গার নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ফাঁড়ি হচ্ছে কই।’’

এই মুহূর্তে বগুলা ক্যাম্পে পুলিশকর্মার সংখ্যা ৭ জন। তার মধ্যে একজন করে এসআই ও এএসআই। কনস্টেবল দু’জন। বর্ডার হোমগার্ড দু’জন। এনভিএফ একজন। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য রয়েছে একটি মোটরবাইক। কিন্তু এই সামান্য সংখ্যক পুলিশকর্মী বগুলার মতো জায়গায় মানুষের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয় তা মানছেন পুলিশ আধিকারিকরাও। তাঁরা জানান, একাধিকবার বগুলায় একটি ফাঁড়ি বা আরওপি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বারেবারে মাঝ রাস্তায় সেই কাজ আটকে গিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ যখন চাইছে‌ন তখন নথিপত্র ভাল করে খতিয়ে দেখা হবে। তারপরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement