বছরের প্রথম দিন পিকনিক। হাঁসডাঙার বিেলের ধারে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
সকাল ৯টাতেই নৌকায় ওঠার লাইন ঘাট ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিল। শনিবার বেলা ১১টায় সেই লাইনের লেজা-মুড়ো বোঝা দায়। নবদ্বীপ ঘাট পেরিয়ে মায়াপুর যাওয়ার এমন ভিড় আগে কোনও দিন দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না ঘাটের কোনও মাঝিমাল্লা। মায়াপুরে যাওয়ার এমন আরও তিনটি পথ বেয়ে সেই ভিড় গিয়ে ইস্কনের সামনে আছড়ে পড়েছে।
ভিড় মাপায় অভিজ্ঞ ইস্কনের জন সংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস লোকের হিসাব দিতে গিয়ে খেই হারিয়ে শুধু বলেন, “আজ প্রচুর, প্রচুর মানুষ এসেছেন।”
নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক লাল্টু ভুঁইয়া বলেন, “প্রাথমিক ভাবে যা দেখা যাচ্ছে তাতে লাখের ওপর মানুষ আজ মায়াপুরে এসেছেন। এমন ভিড় এই প্রথম দেখলাম। রাস, দোল সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে আজকের ভিড়।”
অর্থাৎ, করোনা ডোন্ট কেয়ার!
শীতের আহ্লাদি রোদে রংচঙে পোশাকে কাছে দূরে পিকনিক কিংবা সপ্তাহ শেষের বেড়ানো নলেন গুড় বা কমলালেবুর মতোই অনিবার্য। পাহাড় সমুদ্র না হলেও চলে এসময়। বরং মায়াপুরের ইস্কন মন্দির, কৃষ্ণনগর চার্চ, পলাশির প্রান্তর বা বেথুয়াডহরির অভয়ারণ্য, এমন দিনে লোকারণ্য হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে বিগত বছরের শেষ ক’দিনে হিসেব গিয়েছে পাল্টে। কারণ দুয়ারে ওমিক্রন।
যদিও বছর শুরুর উদ্যাপন ঘিরে মানুষের বেলাগাম উন্মাদনা দেখে অবশ্য সে সব বোঝার উপায় ছিল না এদিন। বেথুয়াডহরি অরণ্য কিংম্বা রানাঘাটের বিনোদন পার্কে মাস্কহীন, পারস্পরিক দূরত্ববিধি চুলোয় পাঠানো জনজোয়ারই ছিল খবর।
বেথুয়াডহরিতে এ দিন ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। সকাল থেকেই নদিয়া জেলা তো বটেই, ভিন্ জেলা থেকেও পর্যটকরা আসেন ঘুরতে। অভয়ারণ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোভিড বিধি নিয়ে কড়াকড়ি থাকলেও বাইরে কোভিড বিধির চিহ্ন বিন্দুমাত্র লক্ষ্য করা যায়নি। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ৭৫০ জনেরও বেশি পর্যটক টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকেন, যা গতকালের তিন গুণ।
রানাঘাটের অবকাশ ও বিনোদিনী পার্কেও প্রবল ভিড় জমেছিল। নানা জায়গা থেকে মানুষ এসেছিলেন। কমবয়সিদের সংখ্যাই ছিল। তাদের মাস্কহীন সেলফি কিংবা ছোটদের মনোরঞ্জনের নানা রাইড ঘিরে ভিড়ে ভয় ছিল না কারও। যদিও রানাঘাট পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পার্কগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।”
বলা তো হল কিন্তু মানে কে? মানায়ই বা কে?