প্রতীকী ছবি
জেলার বেশির ভাগ অংশে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে। তাই গঙ্গার জল শোধন করে দেওয়া হয়। বছর কুড়ি আগে শহরের বুদ্ধপার্ক এলাকায় জল শোধন প্রকল্প চালুও হয়। পুরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তা সত্ত্বেও শহরের মানুষকে ভূগর্ভস্থ জল দেওয়া হচ্ছে। পুরভোটের আগে অনেকেই এ নিয়ে সরব।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার চৈতন্যডোবা থেকে গঙ্গার জল তা আনা হয় বুদ্ধপার্কের ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। ওই প্লান্টে দিনে ৩০ মেগা গ্যালন জল শোধন করা হয়। ওই ট্রিটমেন্ট পান্টের জল শুধু কল্যাণী পুরসভা ছাড়াও গয়েশপুর, কাঁচরাপাড়া, হালিশহর ও নৈহাটি পুরসভার নাগরিকেরাও জল পান।
পুরসভার জল বিভাগের এক কর্মী জানাচ্ছেন, ওই প্লান্ট থেকে যে পরিমাণে জল পাওয়া যায় তা কখনই কল্যাণী মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। দিনের পর দিন কল্যাণীতে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। দিনের পর দিন বহুতল তৈরি হচ্ছে। আর এই অবস্থাতে নাগরিকরা না চাইলেও ভূগর্ভের জলের সঙ্গে গঙ্গার জল মিশিয়ে তা সরাবরাহ করা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, শহরের ২০টি জায়গা থেকে মাটির তলা থেকে জল তোলা হয়। শহরের মোট জলের অন্তত ৩০ শতাংশ তোলা হয় মাটির তলা থেকে। আর ওই জলের সঙ্গে গঙ্গার জল মিশিয়ে সরবরাহ করা হয়।
শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অভিজিৎ শীল জানান, পুরসভা পর্যাপ্ত জল দেয়। এটা ভাল দিক। কিন্তু নদিয়া জেলার বেশিরভাগ অংশই তো আর্সেনিকপ্রবণ। আর মাটির তলার জলে আর্সেনিকের মতো বিষ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তা সত্ত্বেও পুরসভা দিনের পর দিন মাটির তলা থেকে জল তুলছে। এটা মোটেও উচিত নয়। তা ছাড়া মাটির তলার জল যথেচ্ছ ভাবে তোলা হলে জলস্তরের উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।
অভিযোগ রয়েছে জল অপচয় নিয়েও। পুরবাসীদের একাংশ জানান, শহরের কিছু জায়গায় রাস্তার ধারে ‘ট্যাপকল’ রয়েছে। কিন্তু ওই ট্যাপ নেই। ফলে অনবরত জল পড়ে। যেমন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভুট্টাবাজার এলাকারই দু’টি ট্যাপ থেকে অনবরত জল পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মাহাতো বলছেন, ‘‘মত্ত অবস্থায় লোকজন ট্যাপের মুখ ভেঙে দিয়েছে। তবে পুরসভা ওগুলো সারিয়ে দিলেই ভাল হয়। চোখের সামনে জলের অপচয় দেখে খারাপ লাগে।’’ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকে কোনও ফিল্টার ব্যবহার না করেই সরাসরি পুরসভার দেওয়া জল খান। সেই জলে নোংরা থাকে বলে অভিযোগ। কল্যাণীর সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা সুনীল পাহাড়ি জানাচ্ছেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই জলে এত নোংরা থাকে জল খাওয়াই যায় না। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে জল কিনতে হয়।’’
তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীলকুমার তালুকদার বলছেন, ‘‘জল সরাবরাহের দিক থেকে কল্যাণী পুরসভা অনেক এগিয়ে। এখানে জলের কোনও সমস্যা নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শহরের মানুষের মধ্যে জল নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই। ভরা গরমে অনেক জায়গাতেও যখন জলের জন্য হাহাকার পড়ে যায় তখনও কল্যাণীতে জলের কোনও সঙ্কট থাকে না।’’