ভিটে ভুলে গ্রাম ছাড়ছে হোসেনপুর ও নির্মলচর

প্রায় একই পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে নির্মলচর। চরের মানুষও একে একে মূল ভূখন্ডে তাঁদের আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে আস্তানার খোঁজ শুরু করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

হোসেনপুর ও নির্মলচর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫২
Share:

জলভাসি গ্রামে সন্তান কোলে মা। জলঙ্গিতে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

ভাঙন ও বন্যার যৌথ বিপর্যয়ে বসত শূন্য হয়ে গেল ফরাক্কার হোসেনপুর। জল কমলেও বুধবার রাত থেকে ফের ভাঙন শুরু হওয়ায় আর গ্রামের উঁচু জমিতেও থাকার ভরসা পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যে ক’টি পরিবার কোনওরকমে মাথা গুঁজে ছিল গ্রাম, তারাও এ দিন গ্রাম ছেড়ে গিয়েছেন।

Advertisement

প্রায় একই পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে নির্মলচর। চরের মানুষও একে একে মূল ভূখন্ডে তাঁদের আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে আস্তানার খোঁজ শুরু করেছেন। হোসেনপুরে ভাঙন শুকরু হয়েছিল মাস খানেক ধরেই। ফরাক্কা ব্যারাজের জল ছাড়া শুরু হলে ভাসিয়ে দেয় গোটা গ্রাম। ধসে পড়তে সুরু করে মাটির বাড়ি। একের পর এক পরিবার গ্রামের আশপাশে উঁচু জমিতে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হল না। এ বার শুরু হয়েছে গ্রাম-ছাড়া, কেউ বা ঠাঁই নিয়েছেন নিউ ফরাক্কার সরকারি ত্রাণ শিবিরে। বৃহস্পতিবার গ্রাম প্রায় বসত শূন্য। যারা আশপাশে উঁচু ডাঙা খুঁজে ছাউনি গড়ে তুলেছিলেন এ দিন তাঁরাও গ্রাম ছেড়ে চলে যান।

হোসেনপুর গ্রামটি পড়ে বেনিয়াগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে। প্রধান সেলিনা বিবি বলছেন, “বুধবার রাত থেকে ফের ভাঙন শুরু হওয়ায় আর কেউ গ্রামে থাকতে ভরসা পাচ্ছেন না। গ্রামের উঁচু জমিতে অনেকেই আশ্রয় নেওয়াই সেখানে ত্রাণ শিবির খুলে রান্নাবান্না করা যাচ্ছিল। এ দিন তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

ফরাক্কার বিডিও রাজর্ষি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলে প্রায় ৩০০ পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় ১১০০ লোক রয়েছেন শিবিরে। গ্রামে উঁচু জমি বলতে হোসেনপুরে আর কিছু নেই। ধীরে ধীরে তাই সকলেই চলে আসছেন গ্রাম ছেড়ে। তাদের জন্য দুবেলা রান্না করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবারও।’’

এ দিন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান আসেন ফরাক্কায়। কিন্তু তিনিও হোসেনপুরের পথে পা বাড়াননি। ব্লক অফিসে প্রশাসন ও পঞ্চায়েত কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরেই নৌকো করে ধুলিয়ান থেকে হোসেনপুর লাগোয়া মালদহের চরের গ্রামগুলিতে অবশ্য ঘুরতে যান দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে। তিনি অবশ্য ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতির জন্য সরাসরি ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেন, “এক সঙ্গে সব লক গেট খুলে না দিয়ে যদি ধীরে ধীরে গেটগুলি খোলা হত তবে ভাঙন ও বন্যার এমন বিপর্যয় এড়ানো যেত।’’

ভগবানগোলা ২ ব্লকের নির্মলচরে বিসর্জনের সুর। পদ্মার বাড়িগুলোতে জল ঢুকতে শুরু করেছে বেশ কয়েক দিন ধরেই। তার পরই বন্যার জলে প্লাবিত হয় নির্মলচরের পাঁচটি গ্রাম। তারপর টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে উঁচু ঢিপির মত জায়গায় জল না পৌঁছালেও নির্মলচরের বহু এলাকা জলের তলায়। ভিটেমাটি ছেড়ে স্থানীয় বাসিন্দার ঠাঁই নিয়েছে স্থানীয় স্কুলগুলোতে। তবে পরিস্তিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে ওঠায় গ্রাম ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement