নিখুঁতি তুমি কার ঘরের মিষ্টি? শান্তিপুরের?

সরভাজা-সরপুরিয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ‘জিআই’ দাবি করেছে কৃষ্ণনগর। শান্তিপুর বলছে, যদি নিখুঁতি বলে কোনও মিষ্টি আপনি চেখেই থাকেন, তবে এক বার এই শহরের নামটি আপনাকে স্মরণ করতেই হবে। কেননা পান্তুয়ার সঙ্গে রানাঘাট আর সরভাজার সঙ্গে কৃষ্ণনগর যে ভাবে জড়িয়ে, নিখুঁতির সঙ্গে শান্তিপুরও তা-ই। 

Advertisement

সম্রাট চন্দ

 শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫১
Share:

ঐতিহ্য: নিজস্ব চিত্র

প্রশ্নটা সহজ।

Advertisement

রসগোল্লার জন্য বাংলা যদি ‘জিআই’ (উৎপত্তি স্থল হিসেবে ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ বা ভৌগোলিক নির্দেশ) মর্যাদা পেতে পারে, তা হলে নিখুঁতির জন্য শান্তিপুরই বা পাবে না কেন?

সরভাজা-সরপুরিয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ‘জিআই’ দাবি করেছে কৃষ্ণনগর। শান্তিপুর বলছে, যদি নিখুঁতি বলে কোনও মিষ্টি আপনি চেখেই থাকেন, তবে এক বার এই শহরের নামটি আপনাকে স্মরণ করতেই হবে। কেননা পান্তুয়ার সঙ্গে রানাঘাট আর সরভাজার সঙ্গে কৃষ্ণনগর যে ভাবে জড়িয়ে, নিখুঁতির সঙ্গে শান্তিপুরও তা-ই।

Advertisement

স্থানীয় লোকগবেষকদের দাবি, নিখুঁতির জন্ম প্রায় শ’দুয়েক বছর আগে। সেই সময়ে শান্তিপুরের গোভাগাড় মোড়ের কাছে ভোলা নামে এক ময়রার একটি মিষ্টির দোকান ছিল। ভোলা ময়রার কিশোরী মেয়ের নাম ছিল নিখুঁতি। সে প্রায়ই বাবার দোকানে গিয়ে বসত। এক দিন ভোলা ময়রার অনুপস্থিতিতে দোকানে বসে সে খেলার ছলে ছানা দলা পাকিয়ে মিষ্টির রসে ফেলে দেয়। ভাজা হওয়ার পর তোলা হয় সেটি। পরে এক খরিদ্দার এলে অন্য মিষ্টি ফুরিয়ে যাওয়ায় নিখুঁতির তৈরি সেই মিষ্টিটিই দেন ভোলা। সেই মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ হয়ে পরের দিন সেই খরিদ্দার ফের দোকানে আসেন। জানতে চান মিষ্টির নাম। কানে কম শুনতেন ভোলা। তিনি ভাবেন, মিষ্টি যে তৈরি করেছে, তার নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। নাম জেনে নিয়ে খরিদ্দার ওই মিষ্টিই ফের বানাতে বলেন। কালক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই মিষ্টি। নামটা থেকেই যায়।

শান্তিপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ছানার লেচি ভেজে ফেলা হয় রসে। স্বাদ-গন্ধ বাড়াতে দেওয়া হয় গোলমরিচ ও এলাচ। শান্তিপুরের বিভিন্ন দোকানে তৈরি নিখুঁতিতে গোলমরিচের উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী। আকারে ল্যাংচার চেয়ে ছোট, অনেকটা আঙুলের মত দেখতে এই নিখুঁতিই দুই শতাব্দী ধরে ভোজনরসিকদের তৃপ্ত করে আসছে।

নিখুঁতির জন্ম নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিপুরের গবেষক স্বপন রায় ও লেখক সত্যনারায়ণ গোস্বামী। স্বপনের কথায়, ‘‘ভোলা ময়রার সেই দোকান অবশ্য আর নেই। তবে তাঁর দোকানে তৈরি নিখুঁতিই শান্তিপুরের অহঙ্কার।”

শান্তিপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী সুধীর ঘোষ বলেন, “বহু মানুষ অন্য জায়গা থেকে এসে নিখুঁতি কিনে নিয়ে যান। আগে গাওয়া ঘি দিয়ে ভাজা হতো। এখন দাম কম রাখতে মূলত ডালডা দিয়ে ভাজা হয়। তবে স্বাদ-গন্ধ প্রায় একই রয়েছে।”

গত বছরই রসগোল্লা নিয়ে ওড়িশার সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে বাংলা। তাতে উৎসাহিত হয়ে সরপুরিয়া আর সরভাজা নিয়ে আসরে নেমেছে কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতিও। আর নিখুঁতির জন্য ময়দানে লড়তে নেমেছে পুরসভা। শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “এ শহরের নিখুঁতির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। আমাদেরই ‘জিআই’ স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। আমরা তথ্য সংগ্রহ করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement