মেলায় বসেছে অনেক দোকান। চলছে কেনাবেচা। নিজস্ব চিত্র
সাত দিনের মেলা নিয়েই মাতোয়ারা খড়গ্রাম। খড়গ্রাম থানার নগরে বৃহস্পতিবার ওই মেলার সূচনা হয়েছে। ওই মেলাটি এলাকার বাসিন্দাদের কাছে দাতা পিরসাহেবের মেলা বলে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা ও মেলা কমিটির সদস্যদের দাবি ওই মেলাটি প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো মেলা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মেলা কমিটির উদ্যোক্তাদের দাবি, বহু বছর আগে সৈয়দ শাহচাঁদ বাতলা ইরাকের বাগদাদ শহরের বাসিন্দা ছিলেন। সেখান থেকে খড়গ্রাম থানার মণ্ডলশ্বর গ্রামে আসেন। তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মের দীক্ষা নেন ওই থানার আতায় গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য। তারপর থেকে গুরু ও শিষ্য মিলে নগরে থাকতে শুরু করেন। সৈয়দ শাহচাঁদ বাতলা এলাকায় ফকির বলেই পরিচিত ছিলেন। সৈয়দ শাহচাঁদ বাতলার নিজস্ব প্রচুর শিষ্য ছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখ্য মুরাদ হোসেন। গুরু শিষ্য মিলেই বহু বছর আগে ওই মেলার সূচনা করেন। আজও ওই মেলা একই ভাবে হচ্ছে বলে দাবি।
তিন দিন ধরে মেলায় গুরু ও শিষ্যের নামে ভোগ দেওয়া হয়। ওই পিরাস্থানার খাদিমদের দাবি প্রতি বছর ১৯ পৌষ ওই উৎসব শুরু হয়। প্রথম দিন ৩৭টি গোটা মুরগির মাংস ও আতব চালের ভাত রান্না করে মাঝরাতে ভোগ দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে ওই ভোগ পিরাস্তানায় আসা দুঃস্থদের বিলি করা হয়। একই ভাবে দ্বিতীয় দিন ৮৪টি গোটা মুরগির মাংসের ও আতপ চালের ভাত রান্না করে মাঝ রাতে ভোগ দেওয়া হয়। শেষ দিন অর্থাৎ তৃতীয় দিন সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। ওই ভোগকে গ্রামীণ ভাষায় ‘সিজেনো’ বা গোটা সিদ্ধ বলা হয়ে থাকে। সিজেনো তৈরি করতে আড়াই কেজি কালো কাঁচাকলাই, বরবটি আড়াই কেজি সঙ্গে তিনটি সাদাগোটা লাউ, পাঁচ কেজি সাদা সিম, পাঁচ কেজি সাদা পুঁইশাক, পাঁচ কেজি গোটা বেগুন লাগে। ২০০ গ্রাম চিনি ও একশো গ্রাম গাওয়া ঘি এক সঙ্গে একটি বড় হাঁড়িতে দিয়ে সিদ্ধ করে মাঝরাতে ভোগ দেওয়া হয়।
সেবায়ত ফজলে করিম মিঁয়া বলেন “আমাদের দাদুর বাবাদের আমল থেকে যে নিয়মে ভোগ দিয়ে এসেছেন, আমরাও একই নিয়ম মেনে ভোগ প্রদান করে আসছি।” ওই উৎসবে জাতি ধর্মের কোনও বিভেদ থাকে না। মেলা ঘিরে জনজোয়ার তৈরি হয়।