অবাধে। নিজস্ব চিত্র
অনেক কাণ্ড, অনেক বিক্ষোভ, নালিশ, প্রতিশ্রুতির পরেও জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ।
গত কয়েক মাসে একাধিক বার বহিরাগতেরা জেএনএমে ঢুকে ঝামেলা পাকিয়েছে। মাস ছ’য়েক আগে এক বার কাঁচরাপাড়ার এক রোগীর বাড়ির লোক জন এক ইন্টার্নকে থাপ্পড় মেরেছিল। আর সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই চাকদহে এক শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল হাসপাতাল। ওই শিশুর বাড়ির লোক জন এক ইন্টার্নকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর ইন্টার্নেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কয়েকদিনের কর্মবিরতিও পালন করেন। শেষে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজেন্দ্রনাথ পান্ডে এসে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তার পরেই ঘটে এনআরএস কাণ্ড। তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যে এবং গোটা দেশে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেখানে সব সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা ঢেলে সাজানোর জন্য একাধিক পরিকল্পনা স্থির হয়।
কিন্তু অভিযোগ, জেএনএমের নিরাপত্তা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রয়েছে। কিছুদিন আগেই মাঝরাতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ঝামেলায় বিজেপির দুই নেতা কৃষ্ণ মাহাতো ও বিশ্বরূপ কুলভি জখম হন। ওই ঘটনায় দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, জরুরি বিভাগের রোগী যদি হাঁটতে পারেন তা হলে তাঁর সঙ্গে এক জন বাড়ির লোক গেলেই যথেষ্ট। আর যদি রোগীকে ট্রলি করে নিয়ে যেতে হয় সে ক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে দু’জন যাবেন। কিন্তু দিন পাঁচেক আগের ওই ঘটনায় পর দুই বিজেপি নেতার সঙ্গে অন্তত গোটা দশেক লোক জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের আটকাননি। এক জুনিয়র ডাক্তার প্রতিবাদ করার কয়েক জন জরুরি বিভাগ থেকে বেরিয়ে যান।
জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, বিশেষ করে রাতের দিকে এখনও জরুরি বিভাগে বহু লোক ঢুকছেন এবং নিরাপত্তারক্ষীরাও কিছু বলছেন না। হাসপাতালেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, এত বড় হাসপাতালের নিরাপত্তা দায়িত্ব যে বেসরকারি সংস্থার হাতে সঁপে দেওয়া হয়েছে সেই সংস্থা স্থানীয় লোকজনকেই নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজে নিয়েছে। স্থানীয় নেতাদের সুপারিশেই মূলত তাঁদের কাজ হয়েছে। ফলে নেতারা ঝাঁক বেধে হাসপাতালে গেলেও নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের বাধা দিতে পারেন না।
বছর খানেক আগে কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ভাই প্রসূতি বিভাগে লোক ঢুকিয়ে হাঙ্গামা করেন। সেই সময়েই নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে আঙুল উঠেছিল বলে অভিযোগ। বলা হয়েছিল, নিরাপত্তারক্ষীরা নেতাদের ঠেকানোর কোনও চেষ্টাই করেননি। জেএনএমের ইন্টার্ন মেহেদি হাসান মোল্লার কথায়, ‘‘ নিরাপত্তারক্ষীদের না পাল্টালে কোনও ভাবেই হাসপাতালের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে না। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করার দাবি অনেক দিন ধরেই জানানো হচ্ছে। কিন্তু আজও সেই দাবি মানা হচ্ছে না। হাসপাতালের আউটডোর গেট অরক্ষিতই থাকে।’’ আউটডোর গেট দিয়ে ঢুকে যখন খুশি দিব্যি লোকজন সোজা ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন তো জরুরি বিভাগের গেটে অস্ত্রধারী পুলিশ থাকেন। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভোলবদলের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সেই কাজ শেষও হয়ে যাবে।’’ (চলবে)