প্লাস্টিকে ভরসা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
বছরখানেক হয়ে গেল। শান্তিপুর শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধের জন্য এক বার নড়েচড়ে বসেছিল পুরসভা। নির্দেশিকা জারি করে কিছু দিন প্রচার চালানো হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কেউ তাতে কান দেয়নি।
নাগরিকদের সচেতন করার জন্য শুধু প্রচার নয়, মাঝে-মধ্যে বিলি করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব ব্যাগও। কিন্তু কৃষ্ণনগরের মতো ক্রেতা বা বিক্রেতা কারও জরিমানার ব্যবস্থা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, শহরের বিভিন্ন বাজারে পুর কর্তৃপক্ষের নজরদারিও চোখে পড়ে না। শহরের প্রাণকেন্দ্র ডাকঘর মোড় থেকে মোতিগঞ্জ ও আশপাশের অন্য এলাকার নানা দোকানে ফল থেকে শুরু করে পান বিকোচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়কেই। বড়বাজার, স্টেশন সংলগ্ন রেল বাজার, নতুনহাট, সর্বত্রই একই চিত্র। মাছ, মাংস, আনাজ প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঝুলিয়েই বাড়ি ফিরছেন ক্রেতা। কোথাও কোনও বাজারে নজরদারি নেই।
শহরের বাসিন্দাদেরই একাংশ মনে করছেন, এর পিছনে আছে পুরসভার ঢিলেঢালা ভাব। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে তারা শুধু আবেদন-নিবেদনেই আটকে রয়েছে। পরিবেশ ভাবনা মঞ্চের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “এর আগে আমরাও বিভিন্ন বাজারে মানুষকে বলেছি। পুরসভা যদি শুধু সচেতনতা বা প্রচারমূলক কর্মসূচিতে আটকে না থেকে জরিমানা করে বা কড়া আইনি পদক্ষেপ করে, তা হলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
পুরসভা কড়া ব্যবস্থা নিক, এমন দাবি উঠছে আরও নানা মহল থেকে। শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক সুশান্ত মঠও বলেন, “পুর প্রশাসন যদি কড়া পদক্ষেপ না করে, তা হলে সমস্যা চলবেই। কৃষ্ণনগর পারলে আমরাই বা পারব না কেন? কাউন্সিলাররাই বা কেন পথে নামছেন না?”
শান্তিপুরের চা দোকানি মথুরা কর্মকার দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর চায়ের দোকানে প্লাস্টিক কাপের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি খরিদ্দারদের চা দেন মাটির ভাঁড়ে। আবার শান্তিপুরের আগমেশ্বরী পুজো কমিটির তরফে ইতিমধ্যে তাঁদের মণ্ডপে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে।
শান্তিপুরবাসী মাত্রেই জানেন, এ শহরের অন্যতম বড় যন্ত্রণা নিকাশির সমস্যা এবং তার একটা বড় কারণ নিকাশি নালায় জমে থাকা প্লাস্টিকের সামগ্রী। এর পরেও কেন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে পুর প্রশাসন?
শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, প্রচার করেই মানুষকে সচেতন করা যাবে। তাঁরা প্লাস্টিক বর্জন করবেন। তা যখন হল না, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমাদেরও জরিমানার পথেই যেতে হবে।’’ কবে তা ঘোষণা করে তাঁরা রাস্তায় নামবেন? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘নভেম্বরে আমাদের বোর্ড অব কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।’’