বিকিকিনি। নিজস্ব চিত্র
বন্দি আবহে শুধু স্বরটুকুই বেঁচে রয়েছে!
দূরের দেশে আটকে থাকা পরিজনের গলার সেই স্বরটুকু কিংবা ঘরের ফেরার ট্রেন-বাসের হদিস পেতে বদ্ধ জীবনে বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন, চলতি পরিভাষায় অ্যাপ। ছিঁড়ে যাওয়া সেই যোগাযোগটুকু জিইয়ে রাখতে লকডাউনের বাজারে আর কিছু না হোক অ্যানড্রয়েড ফোন কেনার তাই হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
দিন কয়েক আগে, লকডাউনে বিভিন্ন কেনাকাটার ব্যাপারে ছাড় দেওয়া শুরু হতেই ডোমকলের বিভিন্ন গাঁ-গঞ্জেও অনলাইনে লগ-ইন করে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মোবাইল ফোন কিনতে। তাই, লকডাউনের আগে যে এলাকায় সারা মাসে সাকুল্যে পাঁচ-সাতটি অ্যানড্রয়েড ফোন কেনা হত, এখন অনলাইনে তার ক্রেতার সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়েছে। তার কারণ আর কিছুই নয়, ওই সব এলাকার বহু মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক এখনও পড়ে রয়েছেন কেউ মুম্বই কেউ বা সুদূর রাজস্থানে। যা দেখে ডোমকলের এক বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘করোনা যেন এই বন্দি বাজারেও আমাদের ব্যবসার দুয়ার খুলে দিল!’’
ডোমকলের একটি অনলাইন কারবারের ভেন্ডর ইকবাল হাসান বলছেন, ‘‘লকডাউনের তৃতীয় পর্বে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না কিছুই। কিন্তু দিনকয়েক আগে জেলায় কিছু ছাড় মিলতেই মানুষ যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সব ফেলে মোবাইল ফোন কিনতে।’’ ডোমকলের পরিচিত স্মার্টফোনের দোকানি আব্বাস আলি বলেন, ‘‘লকডাউন এবং করোনা আতঙ্কের মধ্যেও যে মানুষ এ ভাবে ফোন কিনতে আসবেন, ভাবিনি। দিন কয়েক আগে দোকান খুলেছি। খোলার সঙ্গে সঙ্গে এত লোক ফোন কিনতে ভিড় করবে! এমন অবস্থা যে দোকানে সামাজিক দূরত্ব বিধি মানাই দায় হয়ে পড়ছে।’’ ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজউদ্দিন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘এখন এক বেলা খাবার না খেলেও মানুষের চলবে, কিন্তু স্মার্টফোন হাতে না থাকলে চলবে না। বিশেষ করে এই লকডাউনের বাজারে স্মার্টফোন অপরিহার্য বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
বহু পরিবারেই ছেলেমেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক মাঝপথেই থমকে গিয়েছে। তাদের পরীক্ষার নিত্যনতুন সময়সূচি, উচ্চশিক্ষার জন্য অনলাইনে পরীক্ষা, এমনকি অনলাইনে পঠনপাঠনের জন্যও অ্যানড্রয়েড ফোন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ডোমকলের কুপিলা গ্রামে বাবর আলি হাসছেন। বলছেন, ‘‘সুতোর মতো ওই ফোনেই তো জুড়ে আছি দূরের পৃথিবীর সঙ্গে। এ ছাড়া আর আছেটা কী!’’