বহরমপুর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘সাগরদিঘি মডেল’। প্রতীকী চিত্র।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট করে লড়াই করেছিল। আর তাতেই কাঙ্ক্ষিত ফল হয়েছে। তৃণমূলকে হারিয়ে জয়লাভ করেছে বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। এই ‘সাগরদিঘি মডেল’ কি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা মিলবে? সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলকে হারানোর পরে এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ‘সাগরদিঘির’ জেলা মুর্শিদাবাদে।
শুধু জোট করে লড়াই করে সাগরদিঘিতে জয়ী হওয়াই নয়, মুর্শিদাবাদের কিছু জায়গায় বাম কংগ্রেসের লোকজনকে যৌথভাবে বিজয় মিছিল করতে দেখা গিয়েছে। দুই দলের নিচুতলার অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, সাগরদিঘির মতো পঞ্চায়েতে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করে লড়াই করলে তৃণমূলকে আটকানো যাবে। তবে কেউ কেউ দুই দলের অতীত ইতিহাসের কথা তুলে ধরে বিপক্ষেও বলছেন।
সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রচারে এসে পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছিলেন, শুধু কংগ্রেস কেন, তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী সকলকে একত্রিত করার জন্য রাজ্যের সর্বত্র তাঁরা কথা বলছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে এসে সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন।পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের এক হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজেপি তৃণমূলকে হারাতে ধর্মনিরপেক্ষ সমস্ত শক্তিকে একজোট হতে হবে।’’
সিপিএমের মুর্শিদাবাদের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে এখনই আলোচনা কিছু হয়নি। তবে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে মানুষ যা চাইছেন তাই হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সাগরদিঘি মডেল বলে কিছু নেই। সাগরদিঘির মানুষ তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে নেমেছিলেন। বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে জয়ী করে তাদের হারিয়েছেন সেখানকার মানুষ। পঞ্চায়েত ভোট এলে তখন জোট নিয়ে আলোচনা হবে।’’
মুর্শিদাবাদে বাম কংগ্রেসের লড়াই দীর্ঘদিনের। অনেক রক্তাক্ত ইতিহাস রয়েছে। সিপিএমের বিরুদ্ধে যেমন কংগ্রেসের লোকজনকে খুন করার ইতিহাস রয়েছে, তেমনই তার উল্টোটাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে পঞ্চায়েতের মতো তৃণমূল স্তরের কর্মীদের কী জবাব দেবেন?
জামির মোল্লা বলেন, ‘‘সাগরদিঘি উপনির্বাচনেও অনেক ধরনের প্রশ্ন সামনে এসেছে। তার পরে এখনকার প্রধান শত্রুকে হারাতে জোট করে লড়াই করেছি। তাতে সাফল্য এসেছে। এখনকার প্রধান শত্রু হল তৃণমূল এবং বিজেপি। তাই অতীতকে ভুলে বাম কংগ্রেসকে এখনকার প্রধান শত্রুকে নিশানা করতে হবে। আর শত্রুকে বধ করতে গেলে কিছু ক্ষতি তো স্বীকার করতেই হবে।’’
তবে বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহরায় বলেন, ‘‘সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কের এবং সাংগঠনিক ক্ষমতার জয় হয়নি। এটা অশুভ শক্তির এবং অর্থের জয় হয়েছে। পঞ্চায়েতে আমাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা রয়েছে। সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে। ফলে পঞ্চায়েতে আমাদের জয় নিশ্চিত।’’জেলা তৃণমূল নেতা অশোক দাস বলেন, ‘‘সাগরদিঘি কোনও মডেল নয়। এর আগেও তো বাম কংগ্রেস জোটের এ রাজ্যে ভরাডুবি হয়েছে।’’