এল প্রতিমা, কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
বাগদেবীর আরাধনার জন্য তিন দিনের সরকারি ছুটি। সোনায় সোহাগার মতো তার সঙ্গে জুড়েছে শনি ও রবিবার। ফলে সরকারি কর্মীদের অপ্রত্যাশিত পাঁচ দিনের ছুটিপ্রাপ্তি।
তারই মধ্যে অবশ্য এ হেন ছুটি নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধীরা। জমে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধী নেতাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন,‘‘কর্মদিবস নষ্ট করে কিসের এত ছুটি?’’ অনেকের আবার মত, এই ছুটি আসলে পুরসভা ভোটের আগে সরকারি কর্মী বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মন ভোলাতে সরকারি ‘উপহার’।
বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে এর আগেও ঢালাও সরকারি ছুটি নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কর্মসংস্কৃতির কথা বলে গত ৮ জানুয়ারি কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটের বিরোধীতা করেছিল রাজ্য সরকার। অনুপুস্থিত সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। একে সামনে এনে আজ থেকে টানা সরস্বতী পুজোর ছুটির সমালোচনা করেছে বামেরা। সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলছেন, “শ্রমিক, কর্মচারীরা যখন বিজেপির বিভেদের রাজনীতি ও তাঁদের জীবন-জীবিকার উপরে নেমে আসা আক্রমণের বিরোধিতায় দেশব্যাপি ধর্মঘটের ডাক দেন তখন কর্মসংস্কৃতির দোহাই দিয়ে তৃণমূল সমর্থন করেনি। আর এখন উৎসবের দোহাই দিয়ে বাড়তি ছুটি দিচ্ছে! কর্মসংস্কৃতি এখন কোথায় গেল?”
বিজেপি আবার এই টানা ছুটির পিছনে হিন্দুত্বের রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছে। তাদের দাবি, এ রাজ্যে হিন্দুদের কাছে টানতে সরস্বতী পুজোতেও ঢালাও ছুটি ঘোষণা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল বলেন, “হিন্দুরা মুখ্যমন্ত্রীর মুখোশ চিনে নিয়েছেন। তাঁরা দুরে সরে গিয়েছেন বুঝতে পেরেই এই ঢালাও ছুটি ঘোষণা করে তাঁদের মন পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
এই সব অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছে, অযথা ধর্মের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, “সরস্বতী পুজো একটা উৎসব। সেই উৎসবে সব ধর্মের মানুষ সমান ভাবে মেতে ওঠেন। বিজেপি সেই উৎসবে উগ্র হিন্দুত্বের প্রলেপ লাগিয়ে বিভাজনের চেষ্টা করছে। সেটা এই রাজ্যের মানুষ কোনও দিন হতে দেবে না।” বামেদের সমালোচনা করে তাঁর মন্তব্য, “ধর্মঘট হল শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের শেষ হাতিয়ার। সিপিএম সেই হাতিয়ারকে ভোঁতা করে ফেলেছে।’’