ঘুরল চাকা রেলের: বহরমপুর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।
সবে আলো ফুটতে শুরু করেছে। ভোরের নিস্তব্ধতা চুরমার করে ট্রেনের হুইসল্ বেজে উঠতেই কামরাগুলিতে সমবেত উল্লাস। অবশেষে চাকা গড়াল। লালগোলা স্টেশন থেকে বুধবার ভোরে প্রথম ট্রেন শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা দিল এভাবেই। সাড়ে সাত মাস পর চেনা দৃশ্য ফিরে এল স্টেশনগুলিতে।
সংক্রমণ এড়াতে সোমবার যাত্রীদের জন্য আদর্শ আচরণবিধি ঘোষণা করেছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। দিনের প্রথম ট্রেনে ভিড় তেমন হয়নি। কিন্তু বেলা যত গড়ায় ততই বাড়তে থাকে ভিড়। যাত্রীরা সকলে মাস্ক পরছেন কি না, সকাল থেকেই তার ওপর কড়া নজর রাখছিল আরপিএফ। বহরমপুর স্টেশনে সকালের পর থেকেই ট্রেন ধরতে আসা এবং ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
অধিকাংশ যাত্রীই মাস্ক পরে স্টেশনে এসেছিলেন। যাঁরা মুখে মাস্ক ছাড়াই স্টেশনে ঢুকেছিলেন, তাঁদের মাস্ক পরে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা। দু’জন বসতে পারেন এমন আসনগুলির একটিতে সাদা কাগজ সেঁটে দেওয়া হয়েছিল রেলের তরফে। তিনটি আসনের ক্ষেত্রে মাঝের আসনটিতে সাঁটা হয় কাগজ যাতে সেখানে কোনও যাত্রী না বসেন। দুপুরের পর থেকে বহরমপুর স্টেশনে দেখা যায়, ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রেলের সাফাইকর্মীরা গোটা চত্বর জীবাণুমুক্ত করছেন।
তবে বেলা যত বাড়ে, নিয়মের গেরোও তত আলগা হতে শুরু করে। দুপুরের পর থেকেই অনেক স্টেশনেই যাত্রীদের মাস্ক ছাড়াই ট্রেনে ওঠানামা করতে দেখা গিয়েছে। রেলযাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের জন্য প্রত্যেক স্টেশনে সকাল থেকে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বেলার পর তাঁরা কাজে যোগ দেন বহরমপুর স্টেশনে। তবে অন্যত্র কোথাও তা দেখা যায়নি বলেই দাবি যাত্রীদের। যদিও বহরমপুর স্টেশনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রথম থেকে সব ব্যবস্থাই ছিল। যাঁরা অসচেতন তাঁরাই তা এড়িয়ে গিয়েছেন।” এদিন মোটামুটি সবক’টি বড় স্টেশনেই অলিখিত প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখতে আরপিএফকে কাজে লাগানো হয়েছিল। টিকিট কাউণ্টারের সামনেও ব্যারিকেড রেখে যাত্রীদের নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এদিন বহরমপুর স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী প্রথম ট্রেনে উঠেছিলেন রজত সাহা। তিনি অবশ্য বলেন, “রেল আদর্শ আচরণবিধি মানার কথা বললেও যা দেখলাম তাতে বেশির ভাগ যাত্রী প্রথম দিনই তা মানছেন না। গায়ে গা ঠেকিয়েই অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাটা রয়েই গেল।’’ এদিন স্টেশন চত্বরে হকারদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে স্টেশনগুলির বাইরের দোকানদারদের মুখে হাসি ফিরেছে, বিক্রিবাটা সামান্য হলেও।