‘কুয়াশায় কিছু দেখতে পাই না রে!’

দাওয়ায় বসে পড়শিদের কোলে ঢলে পড়ে নাগাড়ে আওড়ে চলেছেন কথাগুলো। যাঁকে বলছেন, বাস্তবিকই ছেলেবেলা থেকেই বাসের স্টিয়ারিং তাঁর হাতে। তবু সেই বাসই তাঁর থেঁতলে যাওয়া দেহটা ফিরিয়ে দিল!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর ও কান্দি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩০
Share:

শোকার্ত পরিবার।

কান্নার রোলের মধ্যে কথাটা ঘুরে ফিরে ভেসে আসছিল— ‘তিরিশ বছর ধরে বাস চালাচ্ছে গো মানুষটা, এমন কেন হল গো!’

Advertisement

দাওয়ায় বসে পড়শিদের কোলে ঢলে পড়ে নাগাড়ে আওড়ে চলেছেন কথাগুলো। যাঁকে বলছেন, বাস্তবিকই ছেলেবেলা থেকেই বাসের স্টিয়ারিং তাঁর হাতে। তবু সেই বাসই তাঁর থেঁতলে যাওয়া দেহটা ফিরিয়ে দিল!

বহরমপুরের বল্লারপুরের সুকুমার দাস (৫২) রুজির টানে বাসের চালক হয়ে উঠেছিলেন নিতান্তই তরুণবেলায়। প্রায় তিরিশ বছর ধরে কলকাতা-বহরমপুর রুটে বাস চালিয়ে শেষ দিকে আর পেরে উঠছিলেন না। ভেবেছিলেন ছেড়েই দেবেন। কিন্তু সংসার টানবে কে? বছর দুয়েক ধরে তাই নতুন সংস্থায় যোগ দিয়ে বাস নিয়ে ছুটছিলেন বহরমপুর থেকে শিলিগুড়ি। তাঁর মেয়েরা বলছেন, চোখ ক্রমশ খারাপ হয়ে আসছিল। মেয়েদের কাছে তাই বলতেন, ‘রাত জেগে আর চালাতে পারি না রে, শীতকালে এত কুয়াশা হয়, কিছুই দেখতে পাই না!’

Advertisement

ভেবেছিলেন, বাস যদি চালাতেই হয় তা হলে পুরনো রুটে কলকাতা-বহরমপুরেই ফিরে যাবেন। ‘‘সে আর হল না গো’’, হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন স্ত্রী স্বপ্না। খবরটা তাঁর কাছে এসেছিল শনিবার ভোরেই। মেয়ের ফোন পেয়েও বিশ্বাস হয়নি। বিচলিত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু কোথায় যেন জমে ছিল অবিশ্বাস। ভুলটা ভাঙল বাস মালিকের ছেলে গাড়ি পাঠানোয়। সবাইকে নিয়ে সে গাড়ি ছুটল হাসপাতালে।

বড় মেয়ে পাপিয়া বলছেন, “তাড়াহুড়ো করে বাস চালাতে চাইত না বাবা। তা নিয়ে অনেকে টিটকিরিও দিত। বাবা সে সবে কান দিত না।’’ অথচ সেই সতর্ক হাতই এ দিন সকালে মুখোমুখি পড়ে গেল ছুটন্ত ট্যাঙ্কারের। দুর্ঘটনায় পড়া বাস মালিক শ্যামল সাহাও বলছেন, ‘‘এত শান্ত মানুষ। কোনও দিন নিয়ম ভাঙতেন না। অথচ অবাক হয়ে ভাবছি, সেই বেনিয়মই তাঁর প্রাণ নিল!’’

অবাক হয়ে গিয়েছেন দুর্ঘটনায় মৃত অরূপ ঘোষের মা-ও। চেন্নাইয়ে কর্মরত ছেলের দেশের বাড়ি ঘনশ্যামপুরে ফেরার কথা ছিল। তবে তারই মাঝে ডাক পেয়েছিলেন শিলিগুড়িতে, পুরনো সংস্থার কর্তার তলব, তাই গ্রামে না ফিরে কলকাতা থেকে চলে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি। এ দিন সেখান থেকেই গ্রামে ফিরছিলেন তিনি। মা তাপসী ঘোষ তাই বলছেন, ‘‘জানতাম ছেলে ফিরবে চেন্নাই থেকে। জানালো, ফিরছে শিলিগুড়ি থেকে। কিন্তু যেখান থেকেই ফিরুক, ঘরে তো ফিরবে! সে যে এমন চাদর ঢাকা দিয়ে ফিরবে জানব কী করে বলুন তো!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement