ছেলের সঙ্গে শমসের মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র।
নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। বিড়ি বেঁধে কোনও রকম ছ’জনের পেট চালান শমসের মল্লিক। এক ছেলে আবার শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। সেই সংসারেই আচমকা খুশির হাওয়া। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভাগ্যের চাকা যে এ ভাবে ঘুরে যাবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি বৃদ্ধ। কিন্তু ঘুরল। ধার করা টাকায় লটারির টিকিট কেটে রাতারাতি কোটিপতি বিড়ি শ্রমিক শমসের!
মুর্শিদাবাদে রেজিনগর থানার তকিপুর পশ্চিমপাড়ার শমসেরের বাড়ি। ভাঙাচোরা বাড়িতে ঠাসাঠাসি করে থাকেন সংসারের লোকজন। কিন্তু শমসের চেয়েছিলেন, যে ভাবে হোক এই অবস্থা পাল্টানো দরকার। এই বয়সে কী করবেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। দেখেছিলেন গ্রামের কয়েক জন লটারির টিকিট কিনছেন। ইচ্ছে ছিল, কিন্তু টিকিট কেনারই বা পয়সা কোথায়? ঝোঁকের মাথাতেই ১৫০ টাকা ধার করেছিলেন বৃদ্ধ। সোমবার রাত ৮টায় ১৫০ টাকাই খরচ করে ফেলেন লটারির টিকিট কাটতে। বাড়ির কেউ এ কথা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। ধার করা ১৫০ টাকা এ ভাবে খরচ করার পর শমসেরেরও মনটা খচখচ করছিল। কিন্তু সেই মনকেমনের মেয়াদ ছিল মাত্র ১০ মিনিট। কারণ, ১০-১৫ মিনিট পরেই আসে আনন্দ সংবাদ। পাড়ারই এক জন লটারির টিকিট মিলিয়ে দেখেন শমসের জ্যাকপট জিতে গিয়েছেন।
১ কোটি টাকা পুরস্কার জেতার কথা শুনে আমতা আমতা করছেন শমসের। প্রথমে কী বলবেন, কিছুই বুঝতে পারেননি। পরে একটু ধাতস্থ হয়ে লটারি বিক্রেতা এজেন্টের কাছে নিজের টিকিটটি পাঠিয়েছেন। আর এক সপ্তাহ লাগবে। তার পরই দরিদ্র শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে লটারি জেতার পুরস্কারের টাকা। কী করবেন এত টাকা নিয়ে? হতদরিদ্র শমসের একটু সময় নিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর জবাব দিলেন, ‘‘অক্ষম ছেলেটার জন্য খুব চিন্তা হত। এ বার ওর সঠিক চিকিৎসা করাতে চাই। ওকে ভাল স্কুলে পড়াতে চাই।’’