বুধবার রাজ্যসভায় তা পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুর্শিদাবাদ জুড়ে আগুন জ্বলেছে। নিজস্ব চিত্র।
অসমে নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেই সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদে ছায়া পড়েছিল আতঙ্কের। নথিপত্র জোগাড় করতে না পেরে ডোমকলের এক যুবক আত্মঘাতী হওয়ার পরেই স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠনগুলি এনআরসি বিরোধী রব তুলে নেমেছিল পথে। দিন কয়েকের মধ্যেই সেই ভয়ের ছায়া গ্রাস করেছিল জেলার অন্যত্রও। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হরিহরপাড়ার এক বৃদ্ধের মৃত্যু আর তার জেরে রেশন কার্ড এবং অন্য নথির খোঁজে রাতভর লাইন পড়তে শুরু করেছিল বিডিও অফিসের দুয়ারে।
সেই আতঙ্ক থিতিয়ে যাওয়ার আগেই এ বার দোসর হল নাগরিকত্ব বিল। বুধবার রাজ্যসভায় তা পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা জুড়ে আগুন জ্বলেছে।
আজ, শুক্রবার ইমাম মোয়াজ্জিনদের সংগঠনের উদ্যোগে জুম্মার নমাজ শেষে মুর্শিদাবাদের মসজিদে মসজিদে সিএবি এবং এনআরসি নিয়ে আচলোচনার ডাক দেওয়া হয়েছে। অল ইন্ডিয়া ইমাম মোয়াজ্জিন অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের জেলা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘শুক্রবার জুম্মার নমাজ শেষে জেলা জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল হবে।’’
মিছিল-পথ অবরোধ-ঘেরাও— বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জেলার আনাচ কানাচ থেকে উড়ে আসতে থাকে অজস্র প্রতিবাদের ভাষা।
ডোমকলের মোড়ে মোড়ে পা রাখলেই মাইকের শব্দ। যেন অকাল ভোট। দিন কয়েক ধরে এনআরসি এবং সিএবি নিয়ে বিক্ষোভ সভা সমিতিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ডোমকল। বুধবার জলঙ্গিতে নাগরিক ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন বিডিও অফিসের সামনে। বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি জলঙ্গির বিডিওকে একটি স্মারকলিপিও জমা দেন তাঁরা। ডোমকলে ‘এনআরসি বিরোধী সংহতি’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে করিমপুর বহরমপুর রাজ্য সড়ক প্রায় ৪০মিনিট অবরোধ করা হয়। পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুতুল। জলঙ্গির নাগরিক ঐক্য মঞ্চের সহ-সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘‘এই বিল মানবতাবিরোধী, ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে একটা সরকার দেশে আগুন জ্বালাতে চাইছে। নিজেদের যাবতীয় কুকর্মকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। এই বিলের বিরুদ্ধে আমরা পথে নেমেছি।’’
সারা দিন একই ভাবে তপ্ত থেকেছে বেলডাঙাও। এ দিন বিকেলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বড়ুয়া মোড় অবরোধ করেন বিল-বিরোধী জনতা। রাস্তা রুখেই সভা শুরু করেন তাঁরা। দুপুরে শুরু হওয়া ওই সভায় এক সময়ে সামিল হন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও।
এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ সব থেকে বেশি লক্ষ করা গেছে জঙ্গিপুর ও ধুলিয়ানে। জঙ্গিপুরে কয়েক হাজার মানুষের বিশাল মিছিল করে উমরপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা হাঁটেন। একাধিক জায়গায় পথসভা করেন তাঁরা। রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয় দীর্ঘক্ষণ ধরে। পথ জুড়ে কোথাও বিক্ষোভ কোথাও টায়ার পোড়ানো চলেছে জঙ্গিপুর মহকুমার ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সর্বত্র। জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী আফজাল উদ্দিন বলছেন, “এখনও সাধারণ মানুষের মনে স্পষ্ট ধারণাই নেই এনআরসি নিয়ে। এর থেকে বাঁচতে কি কি তথ্য প্রমাণ লাগবে সে ধারণাও নেই। আতঙ্ক তাই স্বাভাবিক। তার উপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির এন আর সি নিয়ে চাপান উতোর মানুষের মনে আরও বেশি আতঙ্ক ধরাচ্ছে। অবিলম্বে এ নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের।”